যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখার সরকারি নীতির বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। লন্ডনের নিকটবর্তী এপিং শহরের একটি হোটেলে আশ্রয়প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করায় বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
সরকারবিরোধীরা বলছেন, শুধুমাত্র এপিং নয়—দেশের আরও অনেক শহরের স্থানীয় কাউন্সিলগুলোও হোটেল থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের সরাতে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৭,০০০ এর বেশি মানুষ ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এসেছেন, যা অভিবাসনকে অর্থনীতির চেয়েও বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছে।
এপিংয়ের বেল হোটেলটি সম্প্রতি এক যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যদিও অভিযুক্ত সেই আশ্রয়প্রার্থী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনার পর অভিবাসন-বিরোধী ও সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর আদালত হোটেলটিতে নতুন করে আশ্রয়প্রার্থী রাখার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তবে আদালত বলেছে, এটি একটি নির্দিষ্ট মামলার প্রেক্ষিতে দেওয়া আদেশ এবং বছরের শেষ দিকে পূর্ণাঙ্গ শুনানির পর সিদ্ধান্ত বদল হতে পারে।
জনপ্রিয় রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফ্যারাজ স্থানীয় কাউন্সিলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন অভিবাসী হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করুন এবং কাউন্সিলগুলোকে আইনি পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দিন।”
ব্রিটেনজুড়ে প্রায় ৩০,০০০ আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন। সরকার ২০২৯ সালের মধ্যে হোটেলভিত্তিক এই ব্যবস্থা বন্ধ করার পরিকল্পনার কথা বলেছে। তবে এপিংয়ের রায়ের পর যদি অন্যান্য কাউন্সিলও একই পথে হাঁটে, তাহলে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদের আবাসন প্রদানের আইনি দায়িত্ব পালনে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। নিরাপত্তা মন্ত্রী ড্যান জার্ভিস জানান, তারা আদালতের সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখছেন এবং আপিলের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
সমালোচকদের মতে, হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে এবং অপরাধের ঝুঁকি বাড়ছে—বিশেষ করে যখন কিছু অভিবাসীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠে আসছে।
অন্যদিকে, অভিবাসনপন্থী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, অতি-ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি ও গোষ্ঠীগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। ইউরোপজুড়ে এ ধরনের প্রবণতা বাড়ছে, বিশেষ করে ফ্রান্সেও অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন জোরালো হচ্ছে।
গত বছর ব্রিটেনে অভিবাসীদের ঘিরে ছড়ানো ভুল তথ্যের কারণে সহিংসতা ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে।