ইংল্যান্ডে বাসাভাড়া ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স (ONS) প্রকাশিত ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, গড় আয় করা ভাড়াটিয়াদের মাসিক আয়ের ৩৬.৩% ব্যয় হচ্ছে কেবল ভাড়ার পেছনে। আগের বছর এই হার ছিল ৩৪.২%। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, আয়ের ৩০% এর বেশি ভাড়া ব্যয়যোগ্য নয়—যা বহু আগেই অতিক্রম করেছে ইংল্যান্ডের ভাড়াবাজার।
বিশেষ করে লন্ডন এখন সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। রাজধানীতে গড় মাসিক ভাড়া £১,৯৫৭—যার ফলে একজন ভাড়াটিয়ার আয়ের ৪১.৬% চলে যাচ্ছে আবাসনে। শহরের ৩২টি কাউন্সিলের মধ্যে প্রায় সবকটিতেই ২০১৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই এই হার ৩০% ছাড়িয়েছে। কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকা, যেখানে ভাড়া দিতে গড় আয়ের ৭৪.৩% খরচ হয়। ওয়েস্টমিনস্টার, ওয়ান্ডসওর্থ, ক্যামডেন ও হ্যামারস্মিথ অ্যান্ড ফুলহ্যাম এলাকাতেও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম।
লন্ডনের বাইরেও পরিস্থিতি ভালো নয়। ব্রিস্টল (৪৪.৬%), বাথ অ্যান্ড নর্থ ইস্ট সমারসেট (৪২.৭%), ব্রাইটন (৪২.৭%) এবং ট্রাফোর্ড (৪১.৩%) এলাকাগুলো ভাড়াটিয়াদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেভেনোকস (৪২%) ও ওয়াটফোর্ড (৪১%)-এ লন্ডনে যাতায়াতকারী কর্মীদের চাহিদার কারণে ভাড়া বেশি।
তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখনো তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। এখানে মাসিক গড় ভাড়া £৬৪১, যা গড় আয়ের মাত্র ১৯.৮%।
ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ওয়েলসের ২৪টি কাউন্সিলের মধ্যে ২২টিতে ভাড়া এখনো ৩০% সীমার নিচে। কেবল কার্ডিফ এবং ভেল অব গ্ল্যামর্গান সীমা অতিক্রম করেছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে ভাড়া স্থিতিশীল থাকলেও আয়-ভাড়ার অনুপাত কিছুটা বেড়ে ২৫.৩% হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভাড়া যেভাবে দ্রুত বাড়ছে, আয় তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। নতুন কর ও বিধিনিষেধের কারণে অনেক বাড়িওয়ালা প্রপার্টি বিক্রি করে দিচ্ছেন, ফলে বাজারে ভাড়ার ঘরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে ভাড়াটিয়াদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়ছে এবং ভাড়াও বেড়ে চলেছে।
রেন্টারস’ রিফর্ম কোয়ালিশনের পরিচালক টম ডার্লিং বলেন, “সরকার কিছু সংস্কার আনলেও তা ভাড়ার প্রকৃত সমস্যার সমাধান করছে না। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে কেবল ভাড়া মেটাতে বাধ্য হচ্ছে। প্রকৃত সমাধান না এলে সরকারকে এর রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে।”
হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনের বিশ্লেষক সারা কোলস বলেন, “ভাড়াটিয়ারা চরম আর্থিক চাপে রয়েছেন। অনেক বাড়িওয়ালা বাজার ছেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।”
জোসেফ রাউনট্রি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক জোসেফ এলিয়ট সতর্ক করে বলেন, “উচ্চ ভাড়া শুধু মানুষকে নিরাপদ আবাসন থেকে বঞ্চিত করছে না, এটি দারিদ্র্য এবং গৃহহীনতাও বাড়াচ্ছে। সরকারকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে—ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, হাউজিং সাপোর্ট বৃদ্ধি এবং সামাজিক আবাসনের ঘাটতি পূরণে।”
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান