সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের জিয়াপুর পশ্চিম পাড়ার মেয়ে তাসলিমা তামান্না আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা ও নেতৃত্বে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান কলেজ অফ এডুকেশন থেকে “শিক্ষাগত নেতৃত্ব” বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল— “সরকারি স্কুলসমূহে চরিত্র গঠনের শিক্ষানীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে বিদ্যালয় ও জেলার নেতৃত্বের ভূমিকা”।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তাসলিমা তামান্না শৈশব থেকেই ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও পরিশ্রমী। ২০০৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজ থেকে মেধার ভিত্তিতে “কাম লাউড” সম্মানসহ একসাথে দুটি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ২০১৮ সালে আমেরিকান কলেজ অফ এডুকেশন থেকে “ডিসটিংশন” সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
স্নাতক শেষ করার পর তিনি আমেরিকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে এমন খ্যাতনামা দাতব্য সংস্থা ম্যাডিসন স্কয়ার বয়েজ অ্যান্ড গার্লস ক্লাব-এ এডুকেশন ডিরেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি চ্যাম্পিয়ন লার্নিং নামক আরেকটি দাতব্য সংস্থায় হেড প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর তাঁর অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে নিউ ইয়র্কের স্বনামধন্য ইসলামিক স্কুল হামজা একাডেমি-এর প্রিন্সিপাল পদে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে দক্ষ নেতৃত্ব ও চারিত্রিক মূল্যবোধের কারণে তিনি লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টির মেয়র এবং টাউন অফ হ্যাম্পস্টেড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা পদকে ভূষিত হন।
২০১৮ সালে তিনি ‘আইএলএম ফাউন্ডেশন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী চারিত্রিক, সামাজিক এবং ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানে শুধু বাংলাদেশি নয়, আমেরিকান, তুর্কি ও অন্যান্য দেশের মুসলিম শিক্ষার্থীরাও অধ্যয়ন করছেন।
তাসলিমা বর্তমানে কানেকটিকাট শিক্ষা বোর্ড-এ স্কুল বোর্ড উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন, যা সমাজে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক পটভূমি:
তাসলিমা তামান্না বর্তমানে তাঁর স্বামী ও তিন সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে বসবাস করছেন। তিনি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রহমানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এস. এম. জলিল ও হাফছা বি. জলিল দম্পতির জ্যেষ্ঠ কন্যা।
তার এই অনন্য অর্জন উদযাপন করতে গত ২৫ আগস্ট তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য গ্র্যাজুয়েশন পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাসলিমার অবদান ও পথচলার স্মৃতিচারণ করে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তার পিতা আলহাজ্ব এস. এম. জলিল মেয়ের এই সাফল্যের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন এবং ভবিষ্যতেও তাঁর সফলতা অব্যাহত রাখতে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।