শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক। তাদের দাবির মুখে তিতুমীর কলেজকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।
রোববার বিকালে পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, তিতুমীরসহ ৭ কলেজকে নিয়ে সরকার গঠিত কমিটি স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। সময় বেঁধে দিয়ে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা যৌক্তিক না। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অযৌক্তিক ভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব, আর সেটার ভার পরবর্তী সরকারকে বহন করতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। তবে কাউকে যদি বিশেষ বিবেচনা করি সেটা হবে রাজশাহী কলেজ। কারণ রাজশাহী কলেজ অনেক পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী।
তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন করা ভালো। তবে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। কর্মসূচি যদি দিতেই হয় শিক্ষা কার্যক্রম ও জনদুর্ভোগ করে এমন আন্দোলন করা ঠিক নয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সাত কলেজকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকই গঠিত হয়েছে সবশেষ সাত বছরে, যা বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড। আন্দোলন করা ভালো, কিন্তু পরীক্ষাওতো দিতে হবে। যারা নিয়মিত ক্লাস করতে চায় এবং জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে নজর রেখে কর্মসূচি দেওয়া উচিত।
তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে কয়েকদিন ধরে আমরণ অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা ১২টার দিকে পঞ্চম দিনের মতো মহাখালী তিতুমীর কলেজের সামনের দুই রাস্তা বাঁশ দিয়ে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে শনিবার রাতে দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিবতায় রোববারও আমরণ অনশন করেন তারা। অসুস্থ হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এখনো চারজন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে ৭ দফা কর্মসূচি মেনে নেয়ার ঘোষণা আসতে হবে। যতক্ষণ এই ঘোষণা না আসবে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এছাড়া শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত রয়েছে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এরমধ্যেই এ কমিটি তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কলেজগুলোর শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ও মানোন্নয়নই বর্তমানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এক্ষেত্রে করণীয় নব বিকল্পই সরকারের বিবেচনায় থাকবে।
এছাড়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, এ অবস্থায় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই।
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান, ‘এখনই’ অবরোধের ঘোষণা
তিতুমীর কলেজকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। একইসঙ্গে ৭ কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এমন অবস্থায় শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আজই ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কঠোরভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রোববার কলেজটির শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে এমন কর্মসূচি জানানো হয়েছে। সংগঠনটির ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে — ‘এখন মানে এখনই ব্যারিকেড। সবাই তাহবান্দে আসুন’, ‘দাবি আদায়ের এক পথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘সবাই আমতলী মুভ করেন, সড়ক ও রেল অবরোধ হবে’, ‘কাল নয় আজই ব্যারিকেড হবে, এখন মানে এখনই। সবাই দ্রুত চলে আসুন’।
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, আপনাদের (সরকারের) খামখেয়ালি আমাদের রাজপথে আন্দোলনে নামাতে বাধ্য করছে। আমাদের আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হওয়া জনদুর্ভোগের জন্য আপনারা দায়ী।
প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাসবর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ৭ দফা দাবিও জানিয়েছেন। দাবিগুলো হচ্ছে
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
৪. ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ‘আইন’ এবং ‘জার্নালিজম’ বিষয়
সংযোজন করতে হবে।
৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৬. শিক্ষার গুনগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।