ইংল্যান্ডে চলমান তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দরিদ্র, সংখ্যালঘু ও ছোট শিশু থাকা পরিবারগুলো। রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, নিম্ন আয়ের এক-পঞ্চমাংশ পরিবারের প্রায় অর্ধেক (৪৮%) এমন ঘরে বসবাস করে, যা গ্রীষ্মে বিপজ্জনকভাবে গরম হয়ে ওঠে। তুলনায়, ধনী এক-পঞ্চমাংশ পরিবারের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১৭%।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, স্যোশাল হাউজিংয়ে বসবাসকারীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ এবং বেসরকারি ভাড়াটিয়াদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ গরমের চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন। অন্যদিকে, নিজস্ব বাড়ির মালিকদের মধ্যে এ হার ১৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট, অতিরিক্ত জনাকীর্ণ ফ্ল্যাট এবং বাড়িগুলো দ্রুত উত্তপ্ত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।
রাজধানী লন্ডনে “আরবান হিট আইল্যান্ড” প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক। রাজধানীতে ৫৩ শতাংশ ঘর গরমের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, যেখানে রাজধানীর বাইরের এলাকায় এই হার ৩১ শতাংশ।
তাপপ্রবাহজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও গবেষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ঘরের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে।
এদিকে, কর্মক্ষেত্রেও গরমের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। যুক্তরাজ্যে প্রতি চারজন কর্মীর একজন এমন পেশায় রয়েছেন, যেখানে হিট স্ট্রেসের ঝুঁকি আছে। ৫০ বছরের বেশি বয়সী শ্রমিকদের মধ্যে এ হার ৩১ শতাংশ। বঞ্চিত এলাকার কর্মীরা তুলনামূলক কম এয়ার কন্ডিশনিং সুবিধা পান, যা তাদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতের উষ্ণ আবহাওয়া মোকাবেলায় বর্তমান বাড়ি নির্মাণের মান যথেষ্ট নয়। তারা সরকারের আসন্ন “ফিউচার হোমস স্ট্যান্ডার্ড”-এ গ্রীষ্মে ঘর ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রস্তাবিত সমাধানের মধ্যে রয়েছে—ছাদে প্রতিফলক রং, কার্যকর বায়ু চলাচলের নকশা, বাইরের শাটার, ও নগরে পর্যাপ্ত গাছপালা রোপণ।
সরকার জানিয়েছে, নতুন বাড়ি নির্মাণে অতিরিক্ত গরম প্রতিরোধে বিল্ডিং রেগুলেশন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “ফিউচার হোমস স্ট্যান্ডার্ড” পরামর্শে এ সুরক্ষা আরও জোরদার করার পরিকল্পনাও রয়েছে। বিদ্যমান বাড়িগুলো ঠান্ডা রাখতে “বয়লার আপগ্রেড স্কিম”-এর আওতায় এয়ার হিট পাম্প ব্যবহারের সম্ভাবনাও বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান