শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার আলোচনার মধ্যে গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সঞ্চিত অর্থ তুলতে গিয়ে তারা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে—নিজ নিজ শাখায় টাকা না পেয়ে ছুটতে হচ্ছে এক শাখা থেকে আরেক শাখায়।
ঢাকার খিলগাঁও থেকে মতিঝিল, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকেই রাজধানীতে আসছেন নিজেদের জমানো টাকা তুলতে। কিন্তু বহুক্ষেত্রে চাহিদামতো তো নয়ই, সামান্য অংশও মিলছে না।
লক্ষ্মীপুরের গৃহিণী রিমা বেগম বলেন, ‘বিপদের সময় কাজে লাগবে ভেবে টাকা জমিয়েছিলাম। এখন জরুরিভাবে দরকার, কিন্তু তুলতে পারছি না। আমরা একেবারে অসহায়।’
মেয়ের বিয়ের জন্য ছয় বছর ধরে টাকা জমিয়েছিলেন আমির হোসেন। দুই মাস অপেক্ষার পর কিছু অর্থ পেলেও তার অভিজ্ঞতা ছিল দুশ্চিন্তায় ভরা।
ব্যাংকগুলোর শাখায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেকে মাসে মাত্র ৫ হাজার বা সপ্তাহে ১ হাজার টাকা তুলতে পারছেন। আবার অনেকেই খালি হাতে ফিরছেন। একাধিক ব্যাংকের অবস্থা এমন যে, অফিসারদের বেতন দেওয়া নিয়েও সংকটে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্যাংক খাতের এক-তৃতীয়াংশ অচল হয়ে গেলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক-তৃতীয়াংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও ব্যয় আরও বাড়বে।’
শুধু অর্থনীতিবিদই নন, আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন—দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট হওয়া অর্থ খুঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত আনা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই অর্থ ব্যক্তিগত নামে না রেখে আত্মীয়-স্বজনের নামে রাখা হয়। সেসব চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন কেউ অবৈধ অর্থ ভোগ করতে না পারে।’
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েই এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।