ভোগ্যপণ্য থেকে শিল্পের যন্ত্রাংশ কিংবা জ্বালানি আমদানি কমেই চলেছে। ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা বলছেন, শুধু ডলার সংকট নয়, পর্যাপ্ত টাকাও নেই ব্যাংকগুলোতে। এ কারণে আমদানির ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি কমে গেছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাস, রিজার্ভ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে সহসাই।
বাণিজ্য ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) সাংবাদিকদের বলেন, সার, চিনি, ছোলা ও সয়াবিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব পণ্যক্রয় অনুমোদন করেছি।
বিশেষ সময়কে ঘিরে এমন আগাম প্রস্তুতি কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিলেও শঙ্কা কাটছে না প্রায় সব সময়ই সরবরাহ সংকটে ভোগা ভোগ্যপণ্যের বাজারে। ক্রেতারা বলছেন, খুব কষ্টে দিন কাটছে। কোনো একটা পণ্যের দাম হঠাৎ করে ১০ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়ে যায়। কিছুদিন পর যখন দাম কমে, তখন সেটা হয়তো ১৫ টাকা হয়। এভাবে সবকিছুর দাম ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে সাড়ে ১৭ শতাংশ। এলসি খোলাও ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার থেকে নেমেছে ১৩৩ কোটিতে।
এদিকে, শিল্প-কারখানা স্থাপনেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে বেশ। গেল প্রান্তিকে এ খাতের এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ শতাংশ, আর এলসি খোলা কমেছে প্রায় অর্ধেক, ৪১ শতাংশ। জ্বালানি খাতেও এলসি খোলার হার নিন্মমুখী। কিন্তু কেন এই অবস্থা?
সম্প্রতি একটি ব্যাংকের নেতৃত্বে এসেছেন ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলছেন, মূলত ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকার অভাবেই প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানির ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না।
বেশিরভাগ বড় ব্যাংকে এলসি করার জন্য টাকা নেই জানিয়ে মিন্টু সময় সংবাদকে বলেন,
কাঁচামালের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি করা হলো, অথচ এখনও যথাসময়ে প্রয়োজনীয় গ্যাস বা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এলসি করতে না পারলে পণ্যের ঘাটতি হবে। সবকিছু মিলিয়ে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে দ্রব্যমূল্যও বাড়বে।
এলসি খোলা বা নিষ্পত্তি কমার কারণে পণ্যের আমদানিও কমে যায়। আবার শিল্পখাতেও নেমে আসে স্থবিরতা। দুইয়ে মিলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে।
নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন,
অনেক ব্যাংকই সময় মতো পেমেন্ট দিতে পারছে না। এজন্য অনেক পোশাক কারখানা — যারা ওই সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করে, তাদের এলসি অনেক সাপ্লাইয়ার নিচ্ছেন না। ফলে বিনা কারণে কারখানাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সাপ্লাই চেইন ঠিক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা কম থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, রিজার্ভের পতন থেমে যাওয়ায় শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে শুধু রিজার্ভ নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে আমদনি বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।