যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে কঠোর অভিযান। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যারা দেশটিতে অবস্থান করছেন, তাদের সরাসরি বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে সরকার। এতে গভীর উদ্বেগে পড়েছেন যুক্তরাজ্যে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টেক্সট মেসেজ ও ইমেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলা হচ্ছে— ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে অবিলম্বে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তা না হলে জোরপূর্বক অপসারণ করা হবে।
সরকারি বার্তায় বলা হয়েছে, “যদি আপনার যুক্তরাজ্যে থাকার কোনো বৈধ অধিকার না থাকে, তবে আপনাকে অবশ্যই দেশত্যাগ করতে হবে। যদি না যান, আমরা আপনাকে অপসারণ করবো।”
ভিসা শেষ হওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলেও তা “যাচাই-বাছাই করে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান” করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সরাসরি বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়েছেন, চলতি মাস থেকেই ‘চ্যানেল অভিবাসীদের’ প্রথম দলকে ফেরত পাঠানো শুরু হবে। পাশাপাশি শরণার্থীদের জন্য পারিবারিক পুনর্মিলনের আবেদনের প্রক্রিয়াও স্থগিত করা হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে বিশেষ বিমানে করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
মানসিক চাপে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
এই পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যুক্তরাজ্যে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। অনেকেই উচ্চশিক্ষা ও উন্নত জীবনের আশায় পরিবার থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে ব্রিটেনে গেছেন। এখন তারা ভিসা জটিলতা, আইনি হুমকি ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে তারা যুক্তরাজ্যে পড়তে এসেছেন। কিন্তু হঠাৎ এমন আচরণে তারা নিজেকে অমূল্য মনে করছেন।
আইনজীবীর সতর্কতা
লন্ডনে কর্মরত ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন সুমন বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের হাজারো শিক্ষার্থীর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন কমেছে।”
তিনি জানান, যারা গ্র্যাজুয়েট ভিসার মাধ্যমে কাজ করে স্থায়ী হওয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদের আশা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিসা বাতিলের ভয়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, ফলে পড়াশোনায় মনোযোগও কমে যাচ্ছে।
বিকল্প ভাবনায় শিক্ষার্থীরা
এই কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার যুক্তরাজ্যের বদলে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য দেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রতি এই ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত ও হতাশাজনক।