হিথ্রো বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে সাত বছর আগে শনাক্ত হওয়া একটি ত্রুটি অবশেষে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ব্যস্ত এই বিমানবন্দর।
পিএ মিডিয়ার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল গ্রিড ২০১৮ সাল থেকেই নর্থ হাইড সাবস্টেশনের একটি যন্ত্রাংশে আর্দ্রতার উপস্থিতি সম্পর্কে জানত, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ত্রুটির ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তবুও সেটি ঠিকভাবে মেরামত করা হয়নি এবং একাধিকবার রক্ষণাবেক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এই অবহেলার ফলেই ২০২৫ সালের ২০ মার্চ সাবস্টেশনে আগুন লাগে, যার কারণে হিথ্রো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ২৭০,০০০ যাত্রীর ভ্রমণ ব্যাহত হয় এবং শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়।
জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সংস্থার মতে, ন্যাশনাল গ্রিডের অবহেলা এবং দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। জ্বালানি সচিব এড মিলিব্যান্ড একে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছেন।
ন্যাশনাল এনার্জি সিস্টেম অপারেটর (নেসো) জানিয়েছে, সাবস্টেশনের ট্রান্সফরমারে আর্দ্রতা প্রবেশ করে যন্ত্রাংশ বিকল হয় এবং সেখান থেকেই আগুন ছড়ায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে উচ্চমাত্রার আর্দ্রতা ধরা পড়লেও, ২০২২ সালেও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এই দুর্ঘটনা শুধু হিথ্রো নয়, আশপাশের হাসপাতাল, রেল, সড়ক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হাজারো পরিবারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নেসোর প্রধান নির্বাহী ফিন্টান স্লাই বিবিসিকে বলেন, “এই ঘটনাটি দোষারোপ নয়, বরং শেখার সুযোগ। ২০১৮ সালে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।”
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা শক্তি সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সম্পর্কে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের সচেতনতার অভাব তুলে ধরেছে।
হিথ্রো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেছে যে, ন্যাশনাল গ্রিড ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বিমানবন্দরটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পুরনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, দুর্বল সুরক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থতার কারণেই এই বড় বিপর্যয় ঘটেছে।”
এদিকে, হিথ্রো এয়ারলাইন অপারেটরস কমিটির প্রধান নির্বাহী নাইজেল উইকিং জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ৮০ থেকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।