যুক্তরাজ্যে স্কুল ইউনিফর্মের উচ্চমূল্য অভিভাবকদের জন্য নতুন এক আর্থিক সংকট তৈরি করেছে। অনেক পরিবার খাবার কিংবা ঘর গরম রাখার খরচ কমিয়ে ইউনিফর্ম কেনার চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ আবার ঋণ কিংবা “বাই নাউ, পে লেটার” সেবার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অভিভাবক সহায়তা সংস্থা প্যারেন্টকাইন্ড–এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া দুই হাজার অভিভাবকের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ইউনিফর্ম খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ খাবার বা ঘর গরম রাখার খরচ কমাচ্ছেন, আর ৪৫ শতাংশ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ইউনিফর্ম কেনার কথা বলেছেন। এছাড়া ৩৪ শতাংশ অভিভাবক বিলম্বে পরিশোধের সুবিধা নিতে চান।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসন ইউনিফর্ম সংক্রান্ত খরচ কমাতে স্কুলগুলোকে ব্র্যান্ডেড আইটেমের সংখ্যা সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে অনেক স্কুলে ৫ থেকে ১০টি পর্যন্ত ব্র্যান্ডেড ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক, যার খরচ শরীরচর্চা পোশাকসহ গড়ে ৪০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। সরকার ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সর্বোচ্চ তিনটি ব্র্যান্ডেড আইটেম ও একটি টাই বাধ্যতামূলক রাখার পরিকল্পনা করেছে।
অভিভাবকদের মতে, ব্র্যান্ডেড পোশাক শিক্ষার্থীদের আচরণে বা শৃঙ্খলায় কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে না। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, এতে শিক্ষার্থীদের আচরণে কোনো উন্নতি ঘটে না। অধিকাংশ (৮৩ শতাংশ) মনে করেন, সাধারণ ব্র্যান্ডবিহীন ইউনিফর্মও সমান মানসম্পন্ন।
প্যারেন্টকাইন্ডের প্রধান নির্বাহী জেসন এলসম বলেন, “বছরের পর বছর ধরে ইউনিফর্মের খরচ অভিভাবকদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। অনেক পরিবারকে বছরে প্রায় হাজার পাউন্ড পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। ব্র্যান্ডেড ইউনিফর্ম সীমিত করলেই অভিভাবকদের চাপ তাৎক্ষণিকভাবে কমবে।”
অ্যাসোসিয়েশন অব স্কুল অ্যান্ড কলেজ লিডারসের মহাসচিব পেপে দি’ইয়াসিও জানান, যুক্তরাজ্যে শিশুদারিদ্র্যের হার উদ্বেগজনক। অনেক পরিবার মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে না, তাই তিনি সরকারের কাছ থেকে দ্রুত একটি কার্যকর কৌশল ঘোষণার দাবি জানান।
এদিকে, সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন টিমস জানিয়েছেন, আগস্ট ব্যাংক হলিডের আগেই লক্ষ লক্ষ পরিবারকে আগাম ভাতা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগে এ সহায়তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ—যাতে কোনো পরিবারকে খাবার আর ইউনিফর্মের মধ্যে থেকে একটি বেছে নিতে না হয়।”
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান