পাচারহওয়া বিলিয়ন ডলারের অনুসন্ধানে আগত ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর।।
শেখ হাসিনা আমলে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাজ্যের ‘নৈতিক দায়িত্ব’ আছে বলে জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলার উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ের উদ্দেশ্যে আসা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন স্যার কেয়ার স্টারমার।
ফাইন্যানশিয়াল টাইমস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যুক্তরাজ্যের উচিত “নৈতিকভাবে” বাংলাদেশের নতুন সরকারকে এই ‘চুরি যাওয়া’ অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করা। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই অর্থের একটি বড় অংশ বর্তমানে যুক্তরাজ্যেই রয়েছে।
তবে ইউনূস জানান, এখনও স্টারমারের সঙ্গে তার কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।
তিনি বলেন, “তার (স্টারমারের) সঙ্গে সরাসরি আমার কোনো কথা হয়নি,” তবে তার দৃঢ় বিশ্বাস, স্টারমার বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবেন।
কেননা এটা চুরি করা অর্থ।
যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ইউনূসের সঙ্গে স্টারমারের সাক্ষাৎের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই এবং তারা এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি।
যদিও ইউনূস বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ইতিমধ্যে অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করছে, তারপরও তার মতে, যুক্তরাজ্যের উচিত “আইনগত এবং নৈতিক দায়িত্ব” থেকে আরও সক্রিয় হওয়া। তিনি বলেন, এই সফরের উদ্দেশ্য যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে “আরও উদ্দীপনামূলক সমর্থন” আনা।
গত আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার অপসারিত হওয়ার পর থেকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও পাচার তদন্ত নিয়ে কখনো কখনো স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টিও সমালোচনার মুখে পড়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে, স্টারমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সে সময়কার দুর্নীতি দমন বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন। অভিযোগ ছিল, তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সম্পদসহ নানা উপহার পেয়েছেন।
শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। সিদ্দিক সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে তিনি তার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন।
এই সপ্তাহে সিদ্দিক ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সাক্ষাতের অনুরোধ জানান এবং বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ছড়ানো “ভুল বোঝাবুঝি” দূর করতে চান বলে উল্লেখ করেন।
তবে ইউনূস জানিয়েছেন, তিনি সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না।
তিনি বলেন, “এটি একটি আইনি বিষয়… এটি কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়।”
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে “ক্ষমতাকে আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের জন্য টাকা উপার্জনের সুযোগে পরিণত করেছেন।” এ সময় “একটি বৃহৎ লুটপাট প্রক্রিয়া” চলেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হিসাবে, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যুক্তরাজ্যে গেছে।
ইউনূস আরও জানান, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ক্যারিবিয়ান ও মধ্যপ্রাচ্যেও বহু অবৈধ সম্পদ পাচার হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে এই সফরকে তিনি “শুধু শুরু” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, আরও সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সংস্থা, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকল মহল থেকেই সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে তার প্রশাসন।
“আমরা গ্রেট ব্রিটেনের জনগণের সমর্থন চাই,” বলেন ইউনূস।
তার টিম এখনও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করছে।
গত মাসে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) শেখ হাসিনার এক মিত্রের ছেলের মালিকানাধীন লন্ডনের দুটি সম্পত্তিতে অস্থায়ী জব্দাদেশ জারি করে।