যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক হারে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা (NHS) বিতরণ নিয়ে রাজনৈতিক ও জনপর্যায়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ৯ লাখের বেশি এইচসি২ (HC2) সার্টিফিকেট আশ্রয়প্রার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যা মোট ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের প্রায় ৫৯ শতাংশ।
এই তথ্য প্রকাশ করেছে এনএইচএস বিজনেস সার্ভিসেস অথরিটি। জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে মোট ১৫ লাখ ৬০ হাজার HC2 সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।
এই সার্টিফিকেট মূলত কম আয়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা খরচে পূর্ণ সহায়তা দেয়। এর আওতায় বিনামূল্যে প্রেসক্রিপশন, দাঁতের চিকিৎসা, চোখের পরীক্ষা, চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স কেনার ভাউচার এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত যাতায়াত ব্যয় ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা ছয় মাস পরপর নবায়ন করতে হয়।
রাজনৈতিক বিরোধিতা
শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলপস এই পরিসংখ্যানকে “অবৈধ অভিবাসনের খরচের স্পষ্ট প্রমাণ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার দাবি, যারা ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছেন, তারা আশ্রয়ের আবেদন করে করদাতাদের অর্থে ভাতা, আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন—যা অন্য অভিবাসীদের জন্য একটি ‘উৎসাহব্যবস্থা’ তৈরি করছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রধান ড. শন ফিলিপস বলেন, “আশ্রয়প্রার্থীরা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম, অথচ এইচসি২ সার্টিফিকেটের বড় অংশ তাদের দেওয়া হয়েছে। এটি অন্য নাগরিকদের তুলনায় একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অন্যায্য সুবিধা।”
সরকারি তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। চলতি বছরে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে আসা অভিবাসীর সংখ্যা ২৫,০০০ ছাড়িয়েছে, যা এক বছরে রেকর্ড।
সরকার ও এনএইচএস-এর বক্তব্য
সাবেক স্বাস্থ্যসচিব স্টিভ বার্কলে বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের এ ধরনের সুবিধা করদাতাদের অর্থের অপচয় এবং NHS বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি এনএইচএস কর্তৃপক্ষকে সংসদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানান।
এদিকে, NHS-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সংস্থাটি আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, এই সার্টিফিকেট আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যদের চেয়ে স্বাস্থ্যসেবায় কোনো অগ্রাধিকার দেয় না। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, এইচসি২ সার্টিফিকেটের সর্বোচ্চ সংখ্যা ইস্যু হয়েছিল পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময়ে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ