সিলেট অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঈদের ছুটিতে ভিড় করছেন দেশবিদেশের বিপুলসংখ্যক পর্যটক। সৌন্দর্য আর প্রকৃতির মেলবন্ধনে মুগ্ধ ভ্রমণপিপাসুরা। এবার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি পর্যটক ভিড় করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ লাখের বেশি পর্যটক ঘুরেছেন সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনার নাম সিলেট। চোখ জুড়ানো সাদা পাথরের রাজ্য, নয়নাভিরাম জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুলের জলাবন, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চা বাগান—সব মিলিয়ে সিলেট এখন পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য।
গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথরের উপর দিয়ে বইছে স্বচ্ছ জলধারা। পর্যটকরা সেখানে মেতে উঠেছেন জলকেলিতে। অন্যদিকে, সুউচ্চ পাহাড় ঘেরা জাফলংয়ের ওপারে ভারতের ডাউকি শহর আর এপারে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন এক স্বপ্নলোক।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই সিলেটে আসার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু লম্বা ছুটি পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার ঈদের ছুটিতে সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। গতকাল ঘুরেছি রাতারগুল, আজ জাফলংয়ে, কাল যাবো সাদা পাথরে। ফেরার পথে চা বাগান দেখে ফিরব। সিলেটে এত জায়গা যে, সব ঘুরে শেষ করতে পারব কি না জানি না।’
জলবায়ু ও প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ ভ্রমণের জন্য রাতারগুল হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় গন্তব্য। নৌকায় ভেসে ঘুরছেন অনেক পর্যটক। পরিবার-পরিজন নিয়ে কেউ কেউ গেছেন লাক্কাতুরা চা বাগানসহ অন্যান্য স্পটে। এসব এলাকায় দোকানিদের মুখে হাসি ফুটেছে—বিক্রি বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় কয়েকগুণ।
স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তোফাজ্জল বলেন, ‘গত কয়েক বছর খারাপ গেছে। করোনার সময় লোকজন আসেনি। এবার মানুষ অনেক বেশি এসেছে। ৪-৫ গুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমরা খুব খুশি।’
তবে পর্যটকদের দাবি, সৌন্দর্য থাকলেও কিছু মৌলিক সুবিধার ঘাটতি ভ্রমণের আনন্দে ছন্দপতন ঘটায়। দর্শনার্থী নাবিল হোসেন বলেন, ‘জাফলংয়ে নেটওয়ার্ক নেই, কেউ হারিয়ে গেলে খোঁজার উপায় থাকে না। সাদা পাথরে নৌকা ঘাটের অবস্থাও ভালো না। পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নেই, বিশেষ করে নারীদের জন্য খুবই কষ্টকর। সরকার এত রাজস্ব পেলেও এসব খাতে নজর দিচ্ছে না।’
আরেক পর্যটক প্রত্যুষ তালুকদার বলেন, ‘সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য। তবে যোগাযোগব্যবস্থা এবং পর্যটন সুবিধা বাড়ালে ভ্রমণকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে।’
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমেদ জানান, ‘এবার আবহাওয়া ভালো ছিল, পরিবেশও অনুকূলে ছিল, তাই পর্যটকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এতটাই ভিড় যে, হোটেলে জায়গা নেই। আমরা আলাদা দিনে বুকিং নিচ্ছি। আমাদের ধারণা, এবার ঈদ মৌসুমে অন্তত ১০ লাখের বেশি পর্যটক সিলেট অঞ্চলে এসেছেন।’
এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘পর্যটকরা শতভাগ নিরাপদ পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও বিজিবি, পুলিশ এবং সাদা পোশাকের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন।’
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের ছুটির পরও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পুরো মৌসুমজুড়েই সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উল্লেখযোগ্য সমাগম অব্যাহত থাকবে। সঠিক পরিকল্পনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এ খাত থেকে বিপুল রাজস্ব আয় সম্ভব বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।