Uk Bangla Live News | Stay updated with UK Bangla Live News

কোরবানির ইতিহাস ও বিধান

ডেস্ক সংবাদ

কোরবানি একটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো ‘কাছ যেতে’ বা ‘নৈকট্য লাভ করা’। ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় কোরবানি হলো, ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্য নগদ অর্থ বা ব্যবসার পণ্যের মালিক) রয়েছেন, তাদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব।

ইতিহাসে, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবী এবং তাদের উম্মতের উপর কোরবানি করার বিধান ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানির বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু জবাই করার সময় মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করে, কারণ তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিজিক নির্ধারণ করেছেন।” (সুরা হজ, আয়াত ৩৪)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফি (রহ.) বলেন, “আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তার নৈকট্য লাভের জন্য কোরবানি করার বিধান দিয়েছেন।” (তাফসিরে নাসাফি ৩/৭৯)

কোরবানি প্রথম শুরু হয়েছিল হজরত আদম (আ.)-এর যুগে। এর মাধ্যমে কোরবানি করার প্রথম ইতিহাসের সাক্ষী হন হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র, হাবিল এবং কাবিল। হাবিল পশু পালন করতেন এবং একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কোরবানি দেন। অন্যদিকে কাবিল কৃষিকাজ করতেন এবং কিছু শস্য বা গম কোরবানির জন্য দেন। আল্লাহর ইচ্ছায়, হাবিলের কোরবানি কবুল হয়, কিন্তু কাবিলের কোরবানি গ্রহণযোগ্য হয় না। এর মাধ্যমে কোরবানির মৌলিক শিক্ষা পাওয়া যায়, যে কেবল ভালো মনুষ্যত্ব ও পরিপূর্ণ নিবেদনই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ও কোরবানির বিধান ছিল। ইসলামে, হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তার পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিন হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখেন, তিনি তার পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করছেন। ইসমাইল (আ.) তার পিতার আদেশ মেনে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি প্রস্তুত হন। তবে আল্লাহ তাদের পরীক্ষা গ্রহণের পর ইসমাইল (আ.)-এর বদলে একটি বলদ পাঠিয়ে কোরবানি গ্রহণ করেন। এই ঘটনা কোরবানির উদ্দেশ্য ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব বোঝায়।

ইসলামে কোরবানি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত করা হয়। কোরবানি তখনই ওয়াজিব হয় যখন মুসলিম ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে (যেমন সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা এর সমমূল্য অর্থ)। কোরবানির জন্য পশু হিসেবে উট, গাভী, মেষ অথবা ভেড়া প্রাধান্য পায়।

কোরবানি শুধু একটি পশু জবাই করার বিষয় নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ ও আল্লাহর কাছে নৈকট্য অর্জনের একটি উপায়। কোরবানির মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর জন্য নিজের প্রিয় বস্তু বা সম্পদ উৎসর্গ করেন, যা এক ধরনের আত্মিক ত্যাগ। এটি মুসলমানদের মধ্যে একত্ব, ভ্রাতৃত্ব এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন হিসেবে কাজ করে।

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের প্রতীক। কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ ধর্মীয় দায়িত্ব, যা পূর্ববর্তী নবীদের সুন্নত অনুসরণ করার মাধ্যমে পালন করা হয়।

Print
Email

সর্বশেষ সংবাদ

VP_1749669289
যুক্তরাজ্যে দেউলিয়া হওয়ার পথে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের কোম্পানি
যুক্তরাজ্যে দেউলিয়া হওয়ার পথে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের কোম্পানি
2c4d8f4e3ff676ce9503600ceffc89e4
৩১ বছরের বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রবীণ নবজাতক’ এর জন্ম
৩১ বছরের বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রবীণ নবজাতক’ এর জন্ম
image-554531-1748685106
হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার: মেটা এআইয়ের সঙ্গে রিয়েল টাইম ভয়েস চ্যাট
হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার: মেটা এআইয়ের সঙ্গে রিয়েল টাইম ভয়েস চ্যাট
image_211986_1754740290
ইতালিতে গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন
ইতালিতে গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন
WhatsApp Image 2025-08-08 at 16.50.02_1ef6876c
নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটিতে “Folk Wave” শিরোনামে সাংস্কৃতিক কনসার্টের আয়োজন
নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটিতে “Folk Wave” শিরোনামে সাংস্কৃতিক কনসার্টের আয়োজন
DHAKA-Earthquake-20250329150325
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকা: কতটা প্রস্তুত?
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকা: কতটা প্রস্তুত?

সম্পর্কিত খবর