Uk Bangla Live News | Stay updated with UK Bangla Live News

[t4b-ticker]

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বিশেষ আলোচনা

ডেস্ক সংবাদ

‘আর্থিক স্বাধীনতা ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্ভব নয়’ — কামাল আহমদ

বাংলাদেশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বিবিসি বাংলা’র সাবেক সম্পাদক কামাল আহমদ বলেছেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। আর্থিক স্বাধীনতা না আসলে প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে না।”

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ক্লাব হলে অনুষ্ঠিত “গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ও বাস্তবতা” শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় গণমাধ্যম খাতের সংকট, সাংবাদিকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং গণমাধ্যম মালিকপক্ষের একচেটিয়া প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রসঙ্গে কামাল আহমদ বলেন, আমরা দেশের ৮টি বিভাগীয় শহর, নগর ও জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক করেছি । সাংবাদিক, মালিক, একাডেমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১৪শ জনের মতামত নিয়েছি এবং যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি একমত হওয়া গেছে, সেগুলোই প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করেছি।

সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কামাল আহমদ বলেন, মফস্বল থেকে রাজধানী পর্যন্ত অনেক সাংবাদিকেরই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অনিশ্চিত । ফলে অনেকেই মালিকপক্ষের স্বার্থে কাজ করতে বা বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন । পত্রিকার আইডি কার্ড বা টিভি মাইক্রোফোন হাতে দিয়ে সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে “করে খাও” বা “যেভাবে হোক আয় করো”। যা পেশাদার নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়েরের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদ-এর পরিচালনায় আলোচনায় নির্ধারিত আলোচক ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদ এবং সিনিয়র সাংবাদিক ও সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ১৮২ পৃষ্ঠার রিপোর্ট থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, এর মধ্যে রয়েছে:
একই মালিকের অধীনে একাধিক সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল না রাখা।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বাসস — এই তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সম্প্রচার সংস্থা গঠন করে ব্যয় কমানো ও স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের প্রস্তাব।
এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, অফিসিয়াল সিক্রেসি আইন ও আদালত অবমাননা আইন যেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপব্যবহার না হয়, সেদিকে জোর দেওয়া। আশা করা হয়, প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হবে।

গণমাধ্যম নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কামাল আহমদ বলেন, “সাংবাদিকদের আর্থিক ও পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব । এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোরও এ বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেওয়া উচিত । বিএনপির ৩১ দফায় ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বেলাল আহমদ বলেন: “বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই আস্থার সংকট বিরাজ করছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তবে প্রশ্ন থেকে যায় — প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হবে কিনা। আমরা আশা করছি, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সরকার উভয়ই সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”

সিনিয়র সাংবাদিক ও সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন বলেন: “ মিডিয়া নিরাপদ থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজ নিরাপদ থাকবে ।সাংবাদিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক, চাকরির নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ছাড়া প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব নয়। কমিশনের প্রস্তাবনায় এসব বিষয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে সাংবাদিকতার মান উন্নত হবে এবং সমাজে আস্থা ফিরে আসবে।” তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় বাতিল করে গন মাধ্যম কমিশন গঠনে গুরুত্বারোপ করেন।

প্রেসক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন “এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ইউকেতে বসবাসরত সাংবাদিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা । আমরা চাই সবাই এই রিপোর্ট সম্পর্কে জানুক এবং বাস্তবায়নে চাপ সৃষ্টি করুক।”
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সেক্রেটারি, তাইসির মাহমুদ বলেন: “ ৪০ বছর পর এটি দ্বিতীয় গণমাধ্যম সংস্কার রিপোর্ট । আগের বহু আলোচনাতেই সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, আর্থিক সুরক্ষা ও বেতনভাতার উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে । কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এবার আমরা চাই এই প্রস্তাবনাগুলো শুধু রিপোর্টে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে কার্যকর হোক। সাংবাদিকরা যদি সময় সময় প্রস্তাবগুলো মিডিয়ায় তুলে ধরেন তাহলে সরকার তা কার্যকর করতে চাপ অনুভব করবে।
অনুষ্ঠানে আরো আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি যথাক্রমে মহিব চৌধুরী ও মোহাম্মাদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাবেক সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক ও কবি সারওয়ার-ই আলম ও গবেষক ফারুক আহমেদ সহ আরও অনেকে । ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী এবং ট্রেজারার সালেহ আহমেদ।
সভায় প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসিসটেন্ট সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা, এসিসটেন্ট ট্রেজারার ইব্রাহিম খলিল, অর্গানাইজিং এন্ড ট্রেনিং সেক্রেটারি মুহাম্মদ আকরামুল হোসাইন, মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারি মুহাম্মদ আব্দুল হান্নান, নির্বাহী সদস্য সাহিদুর রহমান সুহেল ও জাকির হোসাইন কয়েস।
সভায় উপস্থিত সবাই একমত হন যে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সংবাদ পরিবেশনের মান উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

Print
Email

সর্বশেষ সংবাদ

395313
এক বন কর্মকর্তারই ১৬ স্ত্রী!
এক বন কর্মকর্তারই ১৬ স্ত্রী!
image_222462_1757716716
লন্ডনে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা
লন্ডনে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা
image_222485_1757734663
সালমানের পর গুলি চলল দিশা পাটানির বাড়িতে
সালমানের পর গুলি চলল দিশা পাটানির বাড়িতে
image_222486_1757735052
ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা
ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা
405915
গুরুতর অভিযোগ ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এক চেনামুখের দিকে
গুরুতর অভিযোগ ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এক চেনামুখের দিকে
amar_desh_রংপুর_Division_Lady_Fraud_Arrested
ডিবির জালে আটক অনলাইন ভিসা প্রতারক নারী
ডিবির জালে আটক অনলাইন ভিসা প্রতারক নারী

সম্পর্কিত খবর