গাজা পুনর্নির্মাণে কত ডলার লাগবে, জানালো জাতিসংঘ
ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয়া ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণে ৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের প্রয়োজন। এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর মধ্যে প্রথম তিন বছরে মানবিক সহায়তার জন্য দরকার হবে অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনের হিসাব করা হয়েছে। এতে মোট দরকার হবে ৫৩.১৪২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রথম তিন বছরে প্রায় ২০.৫৬৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে বলে হিসান করা হয়েছে।
সংঘাতের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২৪ সালে গাজার অর্থনীতি ৮৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, বেকারত্ব ৮০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। আর দারিদ্র্য বেড়ে ৭৪.৩ শতাংশ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ২০২৩ সালের শেষের দিকে ছিল ৩৮.৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে গুতেরেস জোর দিয়ে বলেছেন, এই মুহূর্তে মানবিক চাহিদা পূরণটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬.৬ বিলিয়ন ডলারের জরুরি মানবিক সহায়তার আবেদনের কথা স্মরণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আবেদনের পর প্রাপ্ত ৩.৬ বিলিয়ন ডলার গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো পূরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইসরাইলের ১৫ মাসের সামরিক আগ্রাসনে সাজানো-গোছানো গাজা এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। গত মাসে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে এক যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। নিজেদের মাতৃভূমিকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সেই স্বপ্নপূরণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অধিকৃত গাজাকে এবার পুরোপুরি দখলের পায়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা দখল করে পুনর্নির্মাণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আর গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিশরের মতো দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা হবে।
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর হোয়াইট হাউস সফরকালে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু বাদশাহ তা মানতে রাজি হননি। বলেছেন, তার দেশ ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সায় দেবে না। বরং ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই গাজাকে নতুন করে সাজানো যেতে পারে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়া ও এর বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে সরানোর পরিকল্পনা থেকে তিনি সরে আসবেন না।
ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রস্তাবে এরই মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আরব দেশগুলো। মিশর ও জর্ডান বলছে, ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই কিভাবে গাজার পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণ করা যায় সেই পরিকল্পনা তৈরি করছে তারা এবং তা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।