দুর্নীতি, দমনমূলক নীতিমালা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে সৃষ্ট গণবিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হয়।
পদত্যাগপত্রে কেপি শর্মা ওলি লিখেছেন:
“মাননীয় প্রেসিডেন্ট, নেপালের সংবিধানের ৭৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর, দেশের বর্তমানে বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংবিধান অনুসারে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান এবং সমাধানের দিকে আরও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, সংবিধানের ৭৭ (১) (ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে, আজ (মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর) থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”
সোমবার ও মঙ্গলবার—টানা দুই দিন ধরে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ চরমে পৌঁছে। আন্দোলনকারীরা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নামে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও পার্লামেন্ট ভবনের দিকে মিছিল করে যায়। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা।
খবরে জানা যায়, পার্লামেন্ট ভবনেও আগুন লাগানো হয়, ফলে পুরো কাঠমান্ডুতে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে নেপালের সেনাপ্রধান ও রাজনৈতিক নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন ওলি।
বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়ে গেলে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ভাইসেপতির বাসভবন থেকে মন্ত্রীদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপাল সরকার হঠাৎ করেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হলেও, পরবর্তীতে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়।
এই আন্দোলনকে বিক্ষোভকারীরা ‘জেন-জি রেভল্যুশন’ (Generation Z Revolution) নাম দিয়েছেন। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সংগঠিত এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
এর আগে সহিংসতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। সর্বশেষ দেশের প্রধান নির্বাহী কেপি শর্মা ওলিও পদত্যাগ করলেন।