‘জনগণের হক আদায় ও দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যেই নির্বাচন করতে চাই’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে, গত ২৫ জুন সিলেটের জৈন্তাপুরে দলীয় এক সমাবেশে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী উপরদুমকা গ্রামে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আশরব আলী ও মাতা জৈগুন নেছা, উভয়েই ধর্মপরায়ণ, নীতিবান ও সজ্জন মানুষ। এই পরিবার থেকেই তিনি ইসলামি চেতনায় বেড়ে উঠেছেন।
শিক্ষাজীবন
শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় স্থানীয় গারো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ভর্তি হন গোয়াইনঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে সিলেট সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএল.বি ডিগ্রি লাভ করে ১৯৯১ সাল থেকে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সাথে তিনি এই মহান পেশায় এখনো সক্রিয় রয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে শায়খে আব্দুল্লাহ হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহ-এর নির্দেশক্রমে সিলেট-৪ আসন থেকে খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ওই নির্বাচনে তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে শায়খে কৌড়িয়া রাহিমাহুল্লাহ-এর মনোনয়নে একই আসনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ সৃষ্টি করেন। বর্তমানে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ‘কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পারিবারিক জীবন
স্থানীয়রা জানান, মোহাম্মদ আলী একজন পরহেজগার, দায়িত্বশীল ও আদর্শ পিতৃপ্রতিম অভিভাবক হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। তার পরিবারে তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছেন। এদের প্রত্যেকেই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত।
আধ্যাত্মিক জীবন ও ওলামা-মহলে গ্রহণযোগ্যতা
স্থানীয় আলেমদের দাবি, মোহাম্মদ আলী শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, বরং একজন আল্লাহওয়ালা, আল্লাহভীরু ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে পরিপূর্ণ মুসলমান। তিনি ফেদায়ে মিল্লাত শায়েখ আসআদ মাদানী রাহিমাহুল্লাহ-এর খাস মুরিদ এবং একাধিকবার তার সফরসঙ্গী ছিলেন। শায়েখ একাধিকবার তার বাড়িতে তাশরীফ এনেছেন। বর্তমানে তিনি সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী দা.বা.-এর মুরীদ এবং তার তারবিয়াতপ্রাপ্ত। দেওবন্দী উলামা-মহল, বিশেষত মাদানী খান্দানের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
মোহাম্মদ আলীর ছেলে মুফতি মুস্তফা নাদিম জানান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ছিলেন শায়খে আব্দুল্লাহ হরিপুরী রহ.-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এবং শায়েখে গাজিনগরী রহ.-এর প্রিয়জন। বর্তমানেও তিনি সিলেটের মুরব্বি আলেম আল্লামা শায়খ আলীমুদ্দীন দুর্লভপুরী দা.বা., আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দিন দা.বা., আল্লামা শায়খ উবায়দুল্লাহ ফারুক দা.বা., শায়েখ হেলাল আহমদ দা.বা. এবং গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট এলাকার উলামায়ে কেরামের কাছে একজন বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও সম্মানিত মুখ।
জনসেবা ও দানশীলতা
স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্নআয়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্দ আলী সবসময় নীরবে-নিভৃতে জনসেবার পথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। গোয়াইনঘাট ও জৈন্তার প্রায় ৯০% মাদ্রাসা, এমনকি সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের নানা স্থানে তিনি নিজের সাধ্যানুযায়ী দান করে আসছেন। ওয়াজ মাহফিল হোক কিংবা ঈদ—প্রতিটি বিশেষ সময়েই তার এই সাদকার ধারা অব্যাহত থাকে বলেও জানান তারা। বিশেষ করে রোজার মাস, উমরাহ, কুরবানির সময় গোপনে সাহায্য পৌঁছে দেন দরিদ্র ও দুস্থদের কাছে।
রাজনৈতিক দর্শন ও ইশতেহার
মোহাম্মদ আলী বলেন, ভোট নয়, পরকালে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির ভয় নিয়েই নির্বাচন করতে চাই। তিনি বলেন, পদ-পদবীর লোভ আমাদের নেই। জমিয়ত নেতারা খুলাফায়ে রাশেদার আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে জনগণের খাদেম হতে চান। সেবা করতে চান। তাই জনগণের হক আদায় ও ইসলামের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যেই নির্বাচন করতে চাই। তিনি আরও জানান, ‘রাজনীতি ক্ষমতার জন্য নয়, বরং ইবাদতের জন্য’-এই আদর্শেই বিশ্বাসী তিনি।
তার রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ইশতেহারগুলো হলো—
১. ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের প্রসার।
২. উলামায়ে কেরামের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
৩. গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন।
৪. স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন।
৫. দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন।
৬. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
৭. জবাবদিহিমূলক ও জনবান্ধব শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।