যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার প্রথম দিনেই নজরকাড়া একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ওভাল অফিসে স্বাক্ষরিত এই আদেশটি নিয়ে আলোচনা বেশ আগে থেকেই চলছিল, তবে বাস্তবায়নের বিষয়টি নতুন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার, ট্রাম্প ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করার পর মন্তব্য করেন, “এটি আমাদের একটি বড় পদক্ষেপ।” তার এই সিদ্ধান্ত কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় ডব্লিউএইচওর কার্যক্রমের প্রতি তার অসন্তোষের প্রতিফলন। ট্রাম্প পূর্বে এ সংস্থার ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের তুলনামূলক ব্যয়বহুল অনুপাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, তার প্রশাসনের মতে অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেশি আর্থিক দায়ভার বহন করতে হচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে সংস্থাটি সঠিক প্রভাব বা ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তার প্রশাসনের আগের অনেক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার পূর্ববর্তী মেয়াদে ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও, পরবর্তীতে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলেন। কিন্তু এবার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেন।
এদিকে, ট্রাম্পের নতুন এই নির্বাহী আদেশ তার প্রশাসনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের অংশ। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে গৃহীত ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছেদ এখন কেবল আলোচনার বিষয় নয়; এটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ডব্লিউএইচওর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী একটি দেশের প্রত্যাহার বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছেদ বাস্তবায়িত হলে এটি মহামারি মোকাবেলাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কার্যক্রমে অর্থায়ন ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিরোধ এবং এর প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আসন্ন দিনে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।