দিরাইয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়ে সরকারি অনুষ্ঠান, এলাকাবাসীর ক্ষোভ
সিলেটের আলোচিত ব্যক্তি জামিল চৌধুরী, যিনি বিভিন্ন সরকারের শাসনামলে প্রভাব বিস্তার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছেন, এবার আবারও আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আখতারুজ্জামান তার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দিরাইয়ে ‘হাওর উৎসব’-এর আয়োজন করেছেন। তবে এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, অতীতে স্বৈরশাসকদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জামিল চৌধুরী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব আখতারুজ্জামান তাকে পুনরায় সক্রিয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। হাওর উৎসবটি ২ ফেব্রুয়ারি রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমের এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের ও হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান।
প্রাথমিকভাবে, অনুষ্ঠানটি দিরাই উপজেলার তাড়ল গ্রামের একটি মাঠে হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় জনগণের চাপের মুখে তা বাতিল করা হয়। তবে পরে অনুষ্ঠানটি কয়েক কিলোমিটার দূরে উজানধল মাঠে স্থানান্তর করা হয়।
গত ১৬ বছরে জামিল চৌধুরী বিভিন্ন সরকারে থেকে প্রভাব বিস্তার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিপীড়িত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলারও অভিযোগ আছে।
জামিল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি সুবিধা গ্রহণ এবং প্রশাসনিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। তিনি এক সময় জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতেন। তার দুই ছেলে, কায়েস চৌধুরী ও এনাম চৌধুরী, বিভিন্ন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা এই বিতর্কিত ব্যক্তিকে সরকারি অনুষ্ঠানে যুক্ত করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন জামিল চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের পুনর্বাসন না করা হয়। অন্যদিকে, সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এবং ভবিষ্যতে আরও সচেতন থাকবেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।