রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদের ৪২ বিঘা জমি দখল করে রেখেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি—এমন অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মসজিদের জমি দান করেছিলেন তৎকালীন সমাজসেবক হাজী তকের মোহাম্মদ। এই জমির আয় দিয়েই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মৃত ময়নুল হক সরকারের পুত্র জোয়ারদার হোসেন ওরফে লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জমিগুলো নিজের দখলে রেখে স্থানীয়ভাবে বন্ধক ও লিজ প্রদান করছেন এবং অর্থ আত্মসাৎ করছেন। অথচ জমির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি তা উপেক্ষা করছেন।
মসজিদের দীর্ঘদিনের মোতাওয়াল্লি আয়মন নেছা বেগম বলেন, “আমি বহু বছর ধরে ওয়াকফ সম্পত্তি দেখাশোনা করছি। লিটন কৌশলে মোতাওয়াল্লির পদ দখল করতে চাচ্ছে এবং জমি আত্মসাৎ করছে।”
স্থানীয় মুসল্লিরা অভিযোগ করেন, জমির কোনো আয় মসজিদের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। বরং লিটনের লোকজন জমি চাষাবাদ করে এবং বিক্রি করে নিজেদের লাভবান করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হয়রানির শিকার হতে হয়।
মসজিদের সম্প্রসারণে নিজ খরচে কাজ শুরু করেন আবু নুর মোহাম্মদ আহসান হামিদ নামের একজন দানশীল ব্যক্তি। কিন্তু লিটনের অনুসারীরা বাধা দেওয়ায় নির্মাণকাজও বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুসল্লিরা।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রংপুর ওয়াকফ এস্টেট কার্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, “হাজী তকের মোহাম্মদের ওয়াকফ এস্টেটের বৈধ মোতাওয়াল্লি আয়মন নেছা। জমি দখল ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত জোয়ারদার হোসেন লিটন দাবি করেন, “আমি মোতাওয়াল্লি হওয়ার পর থেকেই জমি দেখভাল করছি।” কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনাকে কেন হিসাব দেব? আমাদের পূর্বপুরুষ জমি দিয়েছেন, আমরাই দেখছি।”
এই ঘটনাটি শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগ নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি ঐতিহ্যের ওপর আঘাত। এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী, প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং মসজিদের স্বার্থ রক্ষায় সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।
সূত্র: কালবেলা