যুক্তরাজ্যে অভিবাসন ও অপরাধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে কিছু রাজনীতিবিদ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রাক্তন মন্ত্রীরা সতর্ক করে বলেছেন, কনজারভেটিভ পার্টি ও রিফর্ম ইউকে দলের কিছু নেতার ‘ভয়ভিত্তিক প্রচার’ বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
তারা দাবি তুলেছেন, সরকার ও পুলিশের পরিসংখ্যান আরও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা দরকার, যাতে জনসাধারণ ভুল তথ্যের শিকার না হয়। নিচে কিছু বিতর্কিত দাবি ও সংশ্লিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করা হলো, যেগুলোর যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ:
১. লন্ডনের যৌন অপরাধের ৪০% কি বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত?
কনজারভেটিভ রাজনীতিক রবার্ট জেনরিকের দাবি অনুযায়ী, লন্ডনের যৌন অপরাধের ৪০% বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত হয়। এই তথ্য একটি অভিবাসনবিরোধী থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর মাইগ্রেশন কন্ট্রোল’ থেকে নেওয়া। কিন্তু পুলিশের তথ্য অভিযুক্তদের ভিত্তিতে তৈরি — দোষী সাব্যস্তদের নয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে ১৪,২৪২ জন অভিযুক্তের মধ্যে মাত্র ৮,০৯৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
তিনি আরও দাবি করেন, আফগান ও ইরিত্রিয়ান নাগরিকদের যৌন অপরাধে দোষী হওয়ার সম্ভাবনা ব্রিটিশদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। তবে এই তথ্য পুরনো জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করে এবং সাম্প্রতিক অভিবাসন প্রবণতা উপেক্ষা করে তৈরি হওয়ায় এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২. পুলিশ কি অবৈধ অভিবাসীদের রক্ষা করছে?
কনজারভেটিভ এমপি নিক টিমোথি এক পোস্টে অভিযোগ করেন, পুলিশ এক ‘অবৈধ’ ডেলিভারি চালককে নিরাপত্তা দিচ্ছে। কিন্তু মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ওই চালকের অবৈধভাবে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং তাকে ঘিরে রাখা বিক্ষোভকারীদের কারণে পুলিশ নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে।
৩. প্রতি ১২ জনে একজন কি লন্ডনে অবৈধ অভিবাসী?
টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে প্রতি ১২ জনের একজন অবৈধ অভিবাসী। এই তথ্য একটি অপ্রকাশিত টেমস ওয়াটার গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে পানি ব্যবহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা অনুমান করা হয়েছে। তবে এতে দর্শনার্থী, দ্বিতীয় বাড়ির মালিকসহ নানা অনিয়মিত বাসিন্দাদের একত্রে গণনা করা হয়, ফলে সংখ্যাটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
সরকারি হিসেবে, যুক্তরাজ্যে ৮ থেকে ১২ লাখ অনিয়মিত অভিবাসী থাকতে পারে। ২০১৭ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, লন্ডনে এর সংখ্যা প্রায় ৬.৭ লাখ।
৪. বিতর্ক কেন বাড়ছে?
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে রাজনীতিক নাইজেল ফ্যারেজ একটি শিশু ধর্ষণ মামলার কথা উল্লেখ করেন, যদিও মামলাটি বিচারাধীন। তার মন্তব্য আদালত অবমাননার আওতায় পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফ্যারেজ অবশ্য দাবি করেন, তিনি কোনো আইনি সীমা অতিক্রম করেননি।
এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবহারকারী ভুলভাবে অপরাধীদের জাতিগত পরিচয় তুলে ধরছেন। যেমন, দক্ষিণপোর্টে তিন শিশুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত অ্যাক্সেল রুদাকুবানাকে মুসলিম আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়, যদিও তিনি রুয়ান্ডান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এমন ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা বলছেন, অভিবাসন ও অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে দায়িত্বশীল, সঠিক এবং প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচার এখন অত্যন্ত জরুরি।