সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে জাতীয় পতাকা, বিশেষ করে ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক ও সেন্ট জর্জেস ক্রস, দৃশ্যত বেশি করে প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘অপারেশন রেইজ দ্য কালারস’ নামে পরিচিত এই আন্দোলন চালাচ্ছে একটি দল, উলি ওয়ারিয়রস, যারা বলছে—এটি ব্রিটেনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা জানানোর প্রতীক। তবে অনেকে মনে করছেন, এই আন্দোলনের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব।
উলি ওয়ারিয়রস দাবি করছে, তাদের এই উদ্যোগ ইতিবাচক ও সবার জন্য উন্মুক্ত—জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ব্রিটেনের প্রতি গর্ব ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ৩২ বছর বয়সী লন্ডনবাসী লিভভি ম্যাককার্থিও বলেন, “এটা আমাদের পতাকা—আমরা গর্ব করে তা ওড়াতে পারি।”
তবে ইতিহাস বলছে, বিষয়টি এতটা সরল নয়। ১৯৭০-এর দশকে উগ্র-ডানপন্থি ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ ইউনিয়ন জ্যাককে তাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করত। একইভাবে, সেন্ট জর্জেস ক্রসও একসময় চরমপন্থি ফুটবল সমর্থকদের সঙ্গে জড়িত ছিল। এসব কারণে বহু জাতিগত সংখ্যালঘু, বিশেষ করে অভিবাসী সমাজ, এখনো পতাকার প্রদর্শন নিয়ে অস্বস্তি বোধ করে।
টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাসকারী নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত স্ট্যানলি অরোনসায়ে মনে করেন, যদিও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ, তবু পতাকা নিয়ে এমন উগ্র প্রচারণা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে। একই মত প্রকাশ করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী শ্রীয়া যোশী।
এই জাতীয়তাবাদী আবেগ এমন এক সময়ে বাড়ছে, যখন যুক্তরাজ্যে অভিবাসন ইস্যু ব্যাপক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের জন্য অভিবাসন এখন দেশের অর্থনীতির চেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয়। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হোটেলগুলোর বাইরে হওয়া কিছু বিক্ষোভে দেখা গেছে, সেন্ট জর্জেস ক্রসের মতো পতাকায় লেখা হয়েছে, “ইংলিশরা ঘৃণা করতে শিখছে—সব অবৈধ অভিবাসীকে বের করে দাও।”
এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ডানপন্থি রাজনীতিক নাইজেল ফারাজ ও কনজারভেটিভ এমপি রবার্ট জেনরিক। জেনরিক এমনকি কিছু কাউন্সিলকে “ব্রিটেন-বিরোধী” বলেও আখ্যা দিয়েছেন, কারণ তারা এসব পতাকা সরিয়ে ফেলেছে।
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী পতাকাকে জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে দেখেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, কেউ কেউ এই প্রতীককে বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।