যুক্তরাজ্যে প্রায় ২ হাজার কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট স্পন্সর লাইসেন্স বাতিল করেছে দেশটির হোম অফিস। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হোম অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মোট ১,৯৪৮টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
বাতিল হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ছিল কেয়ার, হসপিটালিটি, রিটেল ও নির্মাণ খাতে, যার মধ্যে কেয়ার কোম্পানিগুলোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কী কারণে লাইসেন্স বাতিল?
হোম অফিস জানায়, এসব কোম্পানি:
-
শ্রমিকদের ঠিকমতো কাজ দেয়নি
-
প্রতিশ্রুত বেতন দেয়নি
-
অফিস বন্ধ করে দেয়
-
অভিবাসীদের শোষণ করেছে
-
ওয়ার্ক ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছে
এই অভিযানকে নতুন লেবার সরকারের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভিসা বাণিজ্য ও প্রতারণা
২০২২-২০২৩ সালে ‘সেলাই কেয়ার ওয়ার্কার’ নামের ভিসার আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে প্রচুর শ্রমিক যুক্তরাজ্যে যান। কিন্তু এই ভিসার আড়ালে চলে চরম বাণিজ্য ও প্রতারণা।
অনেকে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে স্পন্সর বিক্রি করেন, আবার সেই স্পন্সর কিনে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিরিক্ত দামে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন।
বিশেষ করে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল এই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সেখানে:
-
দালালদের মাধ্যমে স্পন্সর কিনে আবার বিক্রি করা হয়েছে
-
নকল স্বামী-স্ত্রী সাজিয়ে ভিসা নেওয়া হয়েছে
-
নকল নিকাহনামা ও ভুয়া সার্টিফিকেট বানানো হয়েছে
-
কিছু অসাধু কাজি ও আইনজীবী এ চক্রে জড়িত ছিলেন
প্রতারিতদের করুণ পরিণতি
এই ভিসায় যারা যুক্তরাজ্যে গেছেন, তাদের অনেকেই:
-
কোম্পানি না পেয়ে বেকার অবস্থায় পড়েছেন
-
ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে
-
মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন
-
আত্মহত্যা ও স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ অবস্থায় গেছেন
অনেকে শেষ সম্বল বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে ভিসার জন্য টাকা জোগাড় করেন। কেউ কেউ ব্যবসার আশায় বিয়েও করেন বা আইইএলটিএস ব্যবসায় নামেন।
অন্যদিকে, অনেক দালাল ও স্পন্সর কোম্পানি লক্ষ-কোটি টাকা আয় করেছেন। কেউ লন্ডনে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন, কেউ আইনি ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে ধনী হয়েছেন।
তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে—প্রতারিত মানুষ দালালদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিবাদ করছেন। কোথাও সালিশ, কোথাও চড়-থাপ্পড়, আবার কেউ অ্যাসাইলাম আবেদনের পথ বেছে নিচ্ছেন।
এই ঘটনার শিকার হাজার হাজার মানুষ শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত।
এই বাস্তবতা এখন যুক্তরাজ্যে অভিবাসন ব্যবস্থার এক গভীর সংকট ও নীতিগত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।