রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান এসে উপস্থিত। শাবান মাসের শেষে দেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার মাধ্যমে শুরু হলো এই বরকতময় মাস। ইসলামিক ফাউন্ডেশন শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রমজানের চাঁদ দেখার খবর নিশ্চিত করেছে। এর ফলে, আজ দেশের মসজিদগুলোতে প্রথম তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। মুসল্লিরা উৎসবমুখর পরিবেশে তারাবির নামাজে অংশগ্রহণ করবেন।
রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অসীম রহমত ও বরকত নিয়ে আসে। এই মাস আত্মার পরিশুদ্ধি এবং তাকওয়া অর্জনের সময়। মহান আল্লাহ তায়ালা যেসব শরিয়ত নাজিল করেছেন, তার মধ্যে সিয়াম সাধনা ছিল একটি অপরিহার্য কর্তব্য। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’
রমজান মাসের অন্যতম প্রধান ইবাদত হলো রোজা রাখা। শরিয়তের ভাষায় রোজা হল, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, যৌনকর্ম এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।
রমজান মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম পবিত্র মাস। এই মাসে প্রত্যেক মুসলমানকে এক বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। একটানা ত্রিশটি দিন, সাতশ’ বিশ ঘণ্টার কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিয়াম সাধনার অনুশীলন চলতে থাকে। রোজাদাররা শেষ রাতে সেহরি খেয়ে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করেন। এরপর রাতের একটি বিশেষ অংশ ‘তারাবি’ নামাজে অতিবাহিত করেন। এভাবে পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর আনুগত্য, সংযম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আন্তরিকতার অনুশীলন করেন।
রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা মুসল্লিদের জন্য এক বিশেষ পুরস্কার রেখেছেন। এই মাসে শয়তানকে পুরো মাস বন্দি করে রাখা হয়, যাতে বান্দারা সঠিকভাবে ইবাদত করতে পারেন। রাসুলে করিম সা. বলেছেন, “রমজান মাস আসলে, এর প্রথম রাত থেকে শয়তান এবং অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়।” এ সময় জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এক ফেরেশতা ঘোষণা করেন, “হে কল্যাণকামী অনুসন্ধানী! তুমি এগিয়ে চল।” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
রমজানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করা সুন্নত। এই দশদিনের মধ্যে একটি বিশেষ রাত রয়েছে, যার নাম লাইলাতুল কদর। অনেকের মতে, এটি ২৭ তারিখ রাত। তবে, কিছু উলামা মনে করেন, এটি শেষ দশ দিনের যেকোনো বেজোড় রাত হতে পারে। রাসুল সা. বলেছেন, “লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনে অনুসন্ধান কর।” তাই আমাদের উচিত, ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখে এই মহিমান্বিত রাতগুলিতে বিশেষভাবে এবাদত করা।
হাদিসে বলা হয়েছে, “হাজার রাতের চাইতে শ্রেষ্ঠ এ পবিত্র রাত লাইলাতুল কদরের রাত পেয়েও যে ব্যক্তি তাকে কাজে লাগাতে না পারল, সে ব্যক্তি দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণকামী কাজ থেকে বঞ্চিত হলো। তার মতো দুর্ভাগা কেউ নেই।” (ইবনে মাজাহ)
এভাবে, রমজান মাস আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাত লাভের মাস হিসেবে মুসলিম উম্মাহর জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।