যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উপকণ্ঠে দেশি শাকসবজি চাষ করে প্রবাসী তিন বাংলাদেশি তরুণ লিখে চলেছেন সাফল্যের নতুন গল্প। হাবিবুর রহমান, আবদুল রাজ্জাক ও ইমদাদুল বাশার—তিনজন মিলে গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রেশ কৃষি’ নামে একটি সবজি খামার, যেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লাউ, শিম, বরবটি, ডাঁটা, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, করলা, কাঁকরোল, শাকসহ নানা ধরনের প্রিয় দেশি সবজি।
প্রবাসে সাধারণত চাকরি বা রেস্তোরাঁ ব্যবসায় যুক্ত থাকাই প্রচলিত হলেও, তারা ভিন্ন পথে হেঁটে শুরু করেন কৃষিভিত্তিক এ উদ্যোগ। লক্ষ্য—একদিকে যেমন প্রবাসীদের দেশি সবজির চাহিদা পূরণ, তেমনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।
হাবিবুর ও রাজ্জাকের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে, আর বাশারের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুরে। হাবিবুর ইতালিতে কৃষিকাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা পরবর্তীতে এই প্রকল্পে কাজে লাগে। ২০২৩ সালে তিনজন মিলে প্রায় ১ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ) বিনিয়োগে লন্ডনের হারলো এলাকায় এক একর আয়তনের একটি গ্রিনহাউস ভাড়া নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ।
প্রথম বছরে উল্লেখযোগ্য লাভ না হলেও ধীরে ধীরে সফলতা আসে। পরবর্তীতে আরও দুই একর গ্রিনহাউস যুক্ত করে উৎপাদন বাড়ানো হয়। চলতি মৌসুমে মাত্র তিন মাসে তারা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা) মূল্যের সবজি বিক্রি করেছেন। মৌসুম শেষে এই অঙ্ক ৫ লাখ পাউন্ড (৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা) ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। দক্ষ শ্রমিকের অভাব, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা এবং প্রশিক্ষণের অভাব প্রকল্পের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। গ্রিনহাউসে প্রাকৃতিক উপকারী পোকা না থাকায় রোগবালাই নিয়ন্ত্রণও করতে হচ্ছে হাতে করে।
‘ফ্রেশ কৃষি লিমিটেড ইউকে’-কে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এক মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১৬ কোটি টাকা) মূল্যের একটি সফল কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। উদ্যোক্তারা একটি নিজস্ব, বড় পরিসরের গ্রিনহাউস নির্মাণের চিন্তাও করছেন।
তাদের বিশ্বাস—এই উদ্যোগ কেবল প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রিয় স্বাদের সবজি সরবরাহই করবে না, বরং যুক্তরাজ্যের কৃষি ও অর্থনীতিতেও একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে—যদি সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগের সুযোগ মেলে।
সূত্র: প্রথম আলো