বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন উন্মাদনার নাম হামজা চৌধুরী। তাঁর আগমনে যেন দীর্ঘদিন পর জাতীয় ফুটবল দল ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ, আর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তৈরি হয়েছে এক ভিন্নমাত্রার আলোচনার জোয়ার। শুধু তিনি একাই নন, তাঁর অনুপ্রেরণায় আরও দুই প্রবাসী ফুটবলার—ফাহামিদুল ইসলাম ও শমিত সোম—বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক করেছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি বাছাইপর্বের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে হারলেও এই তিনজনই মাঠে রেখে গেছেন দৃঢ় পারফরম্যান্সের ছাপ।
ম্যাচের পরদিন সকালেই হামজা ইংল্যান্ডে এবং শমিত কানাডায় ফিরে গেছেন। তবে হামজার এবার ইংল্যান্ডে ঠিকানা পরিবর্তন হচ্ছে। শেফিল্ড ইউনাইটেডে তাঁর ধারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাকে ফিরতে হচ্ছে মূল ক্লাব লেস্টার সিটিতে, যার সঙ্গে তাঁর আরও দুই বছরের চুক্তি রয়েছে। যদিও গ্রিসের নামকরা ক্লাব অলিম্পিয়াকোসে তাঁর যোগ দেওয়ার সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে। যদি গুঞ্জন সত্যি হয়, তাহলে তাঁকে দেখা যেতে পারে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে, যা হবে তাঁর ক্যারিয়ারে এক নতুন মাইলফলক।
বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের কৌতূহল রয়েছে, হামজা শেফিল্ড ইউনাইটেডে থাকাকালীন কত বেতন পেতেন এবং লেস্টারে তাঁর আয় কত ছিল। ক্লাবগুলো সাধারণত খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক গোপন রাখলেও গবেষণা সংস্থা ক্যাপোলজির তথ্য অনুযায়ী, শেফিল্ডে থাকাকালীন হামজার সাপ্তাহিক বেতন ছিল ৪১ হাজার ৪৭৩ ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ৫৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। দৈনিক হিসেবে এই আয় দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯২৪ ইউরো, যা প্রায় ৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট ১২৪ দিনে তাঁর আয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৩৪ হাজার ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
২০২৪–২৫ মৌসুমে তিনি ছিলেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ফুটবলারদের একজন। তাঁর সমান বেতন পেয়েছেন আরও দুই খেলোয়াড়—চিলির ফরোয়ার্ড বেন ব্রেরেটন দিয়াজ এবং ইংলিশ স্ট্রাইকার রিয়ান ব্রুস্টার।
শেফিল্ডে যোগ দেওয়ার আগে তিনি খেলেছেন লেস্টার সিটিতে, যেখানে তাঁর সাপ্তাহিক বেতন ছিল মাত্র ১৭ হাজার ৭৭৪ ইউরো—শেফিল্ডে পাওয়া বেতনের অর্ধেকেরও কম। ফলে নতুন মৌসুমে লেস্টারে ফিরে গেলে তাঁর বেতন বাড়বে কি না, তা সময়ই বলবে।
ধারের মেয়াদে থাকা চুক্তিতে শেফিল্ড ইউনাইটেড চাইলে হামজাকে স্থায়ীভাবে কিনে নিতে পারত, তবে ক্লাবটি এমন কোনো প্রস্তাব দেয়নি। হামজাও নিজে নিশ্চিত নন কোথায় খেলবেন আগামী মৌসুমে। তাঁর বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি ছেলের কাছে জানতে চাইলেও হামজা নাকি বলেছেন, “জানি না।”
লেস্টার সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১৮তম হয়ে মৌসুম শেষ করায় অবনমন হয়েছে, অন্যদিকে শেফিল্ড ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগে ওঠার সুযোগ পেয়েও চ্যাম্পিয়নশিপের প্লে-অফ ফাইনালে সান্ডারল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। ফলে দুই ক্লাবই আগামী মৌসুমে দ্বিতীয় স্তরের লিগে খেলবে।
লেস্টারের কোচ রুড ফন নিস্টলরয়ের অধীনে হামজা নিয়মিত খেলার সুযোগ পাননি। কিন্তু শেফিল্ডের কোচ ক্রিস ওয়াইল্ডার তাঁকে নিয়মিত দলে রেখেছেন, যদিও স্বাভাবিক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড নয়, বরং রাইট-ব্যাক হিসেবে বেশি খেলিয়েছেন, যেখানে তিনি দক্ষতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন।
লেস্টারের স্থানীয় পত্রিকা ‘লেস্টার মার্কারি’ জানিয়েছে, শেফিল্ড যদি প্রিমিয়ার লিগে উঠত, তাহলে তারা হামজাকে স্থায়ীভাবে দলে নিতে চেয়েছিল। এখন শেফিল্ড ও লেস্টার দুই ক্লাবেই টানা চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে হতে পারে, যা হামজার মতো খেলোয়াড়ের জন্য সীমাবদ্ধতামূলক হতে পারে।
গ্রিসের জনপ্রিয় ক্লাব অলিম্পিয়াকোস নাকি হামজাকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী। ক্লাবটির স্প্যানিশ কোচ হোসে লুইস মেন্দিলিবার তাঁর খেলার ধরনে সন্তুষ্ট। ২০২৪–২৫ মৌসুমে গ্রিক সুপার লিগের শিরোপা জেতায় অলিম্পিয়াকোস সরাসরি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিয়েছে, ফলে সেখানে খেললে হামজার ইউরোপিয়ান ফুটবলে অভিষেক হবে।
তবে অলিম্পিয়াকোস যদি হামজাকে নিতে চায়, তাহলে লেস্টার তাঁকে কত দামে ছাড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফুটবলারদের বাজারমূল্য নিয়ে কাজ করা ‘ট্রান্সফারমার্কেট’-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হামজার বাজারমূল্য ৪৫ লাখ ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।