বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যভিত্তিক একাধিক সম্পত্তি জব্দ করেছে দেশটির জাতীয় অপরাধ সংস্থা (NCA)। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বুধবার (১১ জুন) এই তথ্য জানানো হয়।
বর্তমানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং মামলায় তদন্তাধীন রয়েছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এক বিবৃতিতে এনসিএ জানায়, একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ হিসেবে চৌধুরীর কিছু সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছে, যার ফলে তিনি সেগুলো বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। এই তদন্তের মূল লক্ষ্য বিদেশে অর্জিত অবৈধ সম্পদের উৎস শনাক্ত করা ও তা নিয়ন্ত্রণে আনা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আল জাজিরার “The Ministers’ Millions” শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক। এর মধ্যে লন্ডনের অভিজাত সেন্ট জনস উড এলাকায় একটি বিলাসবহুল বাসভবনের মূল্য প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড (১৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি যে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন, তার অনেকটাই বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেই অনুসন্ধানে আল জাজিরার সাংবাদিকরা সরাসরি তার লন্ডনের বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎকারও নেন। সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের বৈদেশিক সম্পদ, বিলাসবহুল জীবনযাপন ও ব্যক্তিগত রুচি—যেমন ব্যয়বহুল স্যুট এবং ডিজাইনার ‘বেবি ক্রোক’ চামড়ার জুতার প্রতি আগ্রহ—নিয়ে অকপটে কথা বলেন।
তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও প্রকাশ করেন। বলেন, “আমি আসলে তার ছেলের মতো। তিনি জানেন যে, এখানে আমার একটি ব্যবসা আছে।”
বাংলাদেশের প্রচলিত বৈদেশিক মুদ্রা আইনের তথ্যানুসারে, কোনো নাগরিক বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারেন না। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, সাইফুজ্জামান এই সীমা বহু গুণ অতিক্রম করেছেন এবং লন্ডন, দুবাই ও নিউইয়র্কে আবাসন খাতে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। অথচ বাংলাদেশের আয়কর রিটার্নে তাঁর এসব বিদেশি সম্পদের কোনো উল্লেখ নেই।
২০২৪ সালের গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। ওই বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত হলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিকও দেশ ত্যাগ করেন—তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।