যুক্তরাজ্যে সুদের হার আগামী মাসগুলোতে আরও কমতে পারে বলে জানাচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য শুল্কের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়তে পারে ব্রিটিশ বাজারেও। ফলে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি বার সুদের হার কমাতে পারে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড সুদের হার ৪.৫ শতাংশে স্থির রাখে। আগে ধারণা করা হয়েছিল ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ দুইবার সুদের হার কমতে পারে, কিন্তু এখন অনেকেই বলছেন—এই হার চারবার পর্যন্ত কমে ৩.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
সুদের হার কীভাবে নির্ধারিত হয়
সুদের হার নির্ধারণ করে ঋণ নেওয়ার সময় কত টাকা বাড়তি দিতে হবে এবং সঞ্চয়ে কত লাভ পাওয়া যাবে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের বেস রেট অনুযায়ী অন্যান্য ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়ের হার নির্ধারণ করে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই হার বাড়ানো বা কমানো হয়। সরকারের লক্ষ্য হলো মুদ্রাস্ফীতির হার ২ শতাংশে রাখা। দাম বেশি বাড়লে সুদের হার বাড়ানো হয়, যাতে মানুষ কম খরচ করে। আর যখন মুদ্রাস্ফীতি কমে আসে, তখন হার কমিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ২.৮ শতাংশ, যা এখনো লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। এজন্যই সুদের হার কমলেও তা ধীরে ধীরে হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে সুদের হার
-
২০২০ সালে কোভিডের কারণে সুদের হার কমে ০.১ শতাংশে আসে।
-
২০২৩ সালে তা বাড়তে বাড়তে ৫.২৫ শতাংশে ওঠে।
-
২০২৪ সালের আগস্টে তা কমে ৫ শতাংশ হয়, এরপর নভেম্বরে ৪.৭৫ শতাংশ।
-
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তা ৪.৫ শতাংশে নেমে স্থির থাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়লে সুদের হার আরও কমতে পারে।
বন্ধক ও ঋণের ওপর প্রভাব
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রতি তিনটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের বন্ধক (বাড়ির ঋণ) রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ পরিবারের বন্ধক সুদের হারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ফলে ব্যাংক রেট বাড়লে বা কমলে তাদের মাসিক কিস্তিও বেড়ে বা কমে যায়।
অন্যদিকে, বেশিরভাগ বন্ধকধারী স্থির হারে ঋণ নিয়েছেন, যার কারণে তাদের কিস্তিতে এখনই পরিবর্তন হয় না। তবে যখন তাদের ঋণের মেয়াদ শেষ হবে, তখন নতুন চুক্তিতে সুদের হার বেশি থাকায় কিস্তি বাড়বে।
আর্থিক তথ্য সংস্থা মানিফ্যাক্টস-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে:
-
দুই বছরের স্থির হার ৫.৩৪ শতাংশ
-
পাঁচ বছরের হার ৫.১৮ শতাংশ
-
দুই বছরের ট্র্যাকার হার ৫.১৯ শতাংশ
এই হারের কারণে অনেক বাড়ির মালিককে আগের তুলনায় বেশি টাকা কিস্তি দিতে হচ্ছে।
আগামী দিনের অর্থনৈতিক চিত্র
ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, তারা আশা করছে যুক্তরাজ্য মন্দায় পড়বে না। তবে বছরের শেষের দিকে মুদ্রাস্ফীতি আবার ৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
ব্যাংকের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, “বিশ্বে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলেও আমরা বিশ্বাস করি, সুদের হার ধীরে ধীরে কমবে।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তাহলে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ২০২৫ সালে চারবারের বেশি সুদের হার কমাতে পারে।