স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ
ব্রাজিলের শিক্ষাঙ্গনে স্মার্টফোন ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি নতুন বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। নতুন আইন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে, যেমন- জরুরি অবস্থা, শিক্ষামূলক কার্যক্রম, কিংবা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে। তবে এসব ব্যতিক্রম ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা বলেন, “আমরা মানবিক মূল্যবোধকে প্রযুক্তির অ্যালগরিদম দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে দিতে পারি না।” তিনি আরও জানান, এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা ও পাঠদানে মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে।
ব্রাজিলের স্মার্টফোন ব্যবহারের বর্তমান চিত্র
ব্রাজিলে স্মার্টফোনের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। দেশটির ২০ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে প্রায় ২৫ কোটি ৮০ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। এক গবেষণা অনুযায়ী, ব্রাজিলীয়রা প্রতিদিন গড়ে ৯ ঘণ্টা ১৩ মিনিট স্মার্টফোনের স্ক্রিনে সময় কাটান, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।
শিক্ষামন্ত্রী ক্যামিলো সান্তানা জানান, কম বয়সেই শিশুরা স্মার্টফোনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের কার্যকলাপ মনিটর করা বাবা-মায়ের জন্য কঠিন করে তুলেছে। তাই, স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক সমর্থন
ব্রাজিলে এই বিলটি বিরল রাজনৈতিক ঐক্যের নজির স্থাপন করেছে। সরকারি ও বিরোধী উভয় পক্ষই এর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
রিও ডি জেনিরোর এক অভিভাবক বলেন, “স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করা কঠিন হলেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি শিক্ষার জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে সামাজিক যোগাযোগের জন্য এর ব্যবহার সীমিত করা উচিত।”
বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ
ব্রাজিলের পাশাপাশি চীন, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত আটটি রাজ্যে এ সংক্রান্ত আইন পাস হয়েছে। ইউরোপের অভিভাবকরাও স্মার্টফোনের কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ব্রাজিলের এই উদ্যোগ কিশোর শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি নির্ভরতা কমিয়ে তাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।