হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি একজন মুমিনের জীবনে অন্যতম বৃহৎ ইবাদত। হজ পালনের মাধ্যমে যে তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, তা ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য হজের পর জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল চালু রাখা উচিত, যা ইমানদার ও সচেতন মুমিন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।
১. তাওবা ও ইস্তিগফার অব্যাহত রাখা
হজে গিয়ে মানুষ আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে, নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। এই তাওবার ধারাবাহিকতা হজের পরেও অব্যাহত রাখা উচিত। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, হে মুমিনগণ, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা আন-নূর: ৩১)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। আমি নিজে প্রতিদিন একশ বার তাওবা করি।” (সহিহ মুসলিম: ২৭০২)
২. নিয়মিত সৎ আমলে অটল থাকা
হজের সময় যে ইবাদতগুলো—নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দান, জিকির—অবশ্যক ছিল, তা যেন দেশে ফিরে এসেও অব্যাহত থাকে।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো সেই আমল, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প।” (সহিহ বুখারি: ৬৪৬৫; মুসলিম: ৭৮৩)
৩. সদাচরণ ও হজের প্রভাব সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া
হজে অর্জিত ধৈর্য, সত্যবাদিতা, সহনশীলতা ও নৈতিক গুণাবলি শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দের হক আদায়ের নির্দেশ দেন।” (সুরা আন-নাহল: ৯০)
৪. গুনাহ থেকে বিরত থাকা ও তাকওয়া চর্চা
হজের পর যেন কেউ আবার পূর্বের গুনাহের জীবনে ফিরে না যায়, এজন্য আল্লাহভীতি বা তাকওয়ার চর্চা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পরহেজগারদের নিকট থেকেই (আমল) কবুল করেন।” (সুরা মায়িদাহ: ২৭)
৫. হজের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া
হজে পাওয়া ইমানি জ্ঞানের আলো পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজে ছড়িয়ে দেওয়াই একজন মুসলমানের দায়িত্ব।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“আমার পক্ষ থেকে মানুষকে জানাও, যদিও তা একটি আয়াতই হয়।” (সহিহ বুখারি: ৩৪৬১)
৬. হালাল জীবিকা অর্জনে সচেতনতা
হজ মকবুল হওয়ার আলামতের একটি হলো হালাল রুজি ও বিশ্বস্ততার উপর দৃঢ় থাকা।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“আল্লাহ পবিত্র, তিনি শুধুমাত্র পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।” (সহিহ মুসলিম: ১০১৫)
৭. অতীত গুনাহের ক্ষতিপূরণে নেক আমলের প্রতি মনোযোগ
হজের পর অতীতের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে হলে নফল নামাজ, রোজা, দান-সদকা ইত্যাদিতে মনোযোগী হওয়া উচিত।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“কোনো মন্দ কাজ করলে তার পরে ভালো কাজ করো, তা মন্দ কাজকে মুছে দেবে।” (তিরমিজি: ১৯৮৭)
৮. হজ কবুল হওয়ার জন্য দুআ করা
শুধু হজ করাই যথেষ্ট নয়; হজ যেন আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, সেই দুআ চালিয়ে যেতে হবে।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“মকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।” (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩; মুসলিম: ১৩৪৯)