যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনের এমপি ও সাবেক সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে তিনি এখন বলির পাঠা হয়ে উঠেছেন। গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আনুষ্ঠানিক মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে টিউলিপ তার পরিবারের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে জমি পেয়েছেন। টিউলিপ এই অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি জানান, এখনো কোনো সমন পাননি এবং ব্যক্তিগতভাবে হাজির হবেন কি না, তা সিদ্ধান্ত নেননি।
টিউলিপ বলেন, তিনি যেন এক ধরনের “কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্নে” আটকে পড়েছেন—যেখানে বিদেশে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, অথচ অভিযোগগুলো স্পষ্ট নয়। তিনি ব্রিটিশ আইনজীবী হুগো কিথ কেসির পরামর্শ নিচ্ছেন।
২০২৪ সালের শেষদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। তিনি দাবি করেন, এই সরকারের সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়ানো হয়—যেমন রূপপুর প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, যার প্রমাণ হিসেবে ২০১৩ সালের একটি ছবি ব্যবহার করা হয়, যেখানে তাকে পুতিন ও হাসিনার সঙ্গে দেখা যায়। টিউলিপ বলেন, এটি ছিল নিছক ভ্রমণের অংশ।
আরেকটি অভিযোগে বলা হয়, ২০০৪ সালে এক ব্যবসায়ী তাকে লন্ডনে ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন, যিনি হাসিনার দলের ঘনিষ্ঠ। টিউলিপ এই অভিযোগও অস্বীকার করে বলেন, ওই ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন।
আরও অভিযোগ ওঠে, কেন তিনি নিজের বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশি এক ডেভেলপারের বাড়িতে উঠেছিলেন। টিউলিপ জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে হঠাৎ বাসা বদলাতে হয়েছিল।
মন্ত্রিত্ব চলাকালে এ অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজেই নৈতিক মানদণ্ডবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করেন। দুই সপ্তাহের তদন্ত শেষে ম্যাগনাস তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলেও জানান, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সম্ভাব্য সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত ছিল।
পরবর্তীতে বিভ্রান্তি এড়াতে টিউলিপ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ভবিষ্যতে তার ফিরতি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন। তবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আসেনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচন অনিশ্চিত, এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সহিংসতার প্রমাণ সংগ্রহ চলছে। এ প্রসঙ্গে টিউলিপ জানান, তিনি ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে গেলে, আমি ইউনূস-হাসিনা দ্বন্দ্বের বলির পাঠা। বাংলাদেশে কেউ কেউ নিশ্চয়ই অন্যায় করেছে, কিন্তু আমি তাদের একজন নই।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান