
রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী হিমেলের জানাজা সম্পন্ন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত মাহমুদ হাবিব হিমেলের জানাজা হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা হয়।
জানাজা শেষে হিমেলের মরদেহ গাড়ি করে নাটোরের উদ্দেশে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে মরদেহ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা।
জানাজার সময় নিহত শিক্ষার্থীর মামা মো. মুন্না বলেন, ‘হিমেল খুব অল্প বয়সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমার বোন আগে স্বামীহারা ছিলেন, আর এখন সন্তানহারা হয়ে গেলেন। এ কষ্ট মেনে নেওয়া কঠিন। ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো দুর্ঘটনা আর না ঘটে।’
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘সন্তানহারা পিতার পক্ষে বক্তব্য দেওয়া কঠিন৷ আজ আমার লাশ হিমেলের কাঁধে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ যে কত ভারী! আমি হিমেলের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, সেসব দাবি মেনে নেব। এরই মধ্যে আমি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। আমরা হিমেলের মায়ের সব দায়িত্বও নিয়েছি। আমরা চাই, এভাবে যাতে আর কোনো হিমেল যেন মারা না যায়।’
ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ নিয়ে হিমেলের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার জায়গা থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী এ ক্ষতিপূরণ আমরা দিতে পারব। আজ হিমেলের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে। এটা নিয়ে আমরা আজ শিক্ষকদের সঙ্গে বসব।’
এর আগে প্রক্টর লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার, ছাত্র নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের, নিহত ছাত্রের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি রাবি উপাচার্য মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় হিমেল এক বন্ধুসহ ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরছিলেন। হিমেলের মৃত্যুর খবরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি ট্রাক ও নির্মাণ শ্রমিকদের ঘরে আগুন দেয়।
নিহত মাহমুদ হাবিব হিমেলের বাড়ি বগুড়ায়। হিমেলের বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা দুই সন্তানসহ নাটোরে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। হিমেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মোটরসাইকেলে হিমেলের সঙ্গে থাকা রায়হান প্রামাণিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাত ১২টার পর ক্যাম্পাসে যান। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে অনিরাপদ ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণকাজ চলছে। যার কারণে এ দুর্ঘটনা। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার পর প্রক্টরকে জানানো হলে তিনি মিটিংয়ের অজুহাত দিয়ে ঘটনাস্থলে যাননি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সব নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। চালক গ্রেপ্তার ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’