
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি, রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪১ শতাংশ
করোনার মধ্যেও বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পণ্য রপ্তানি আয়। নতুন করে রপ্তানি আয়ে আশা জাগিয়েছে। ফলে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বরে রেকর্ড রপ্তানির পর গত মাসেও পণ্য রপ্তানি হলো ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৬ শতাংশ বেশি।
এর আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪১ কোটি ৩৫ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার রপ্তানি বেড়েছে। যা শতাংশের হিসেবে বেড়েছে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। সেখানে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ৮০ কোটি ডলার বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে ওমিক্রনের মাসে। যা শতাংশের হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ শতাংশের বেশি।
ইপিবির পরিসংখ্যান আরও বলছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত বিশেষত পোশাক, তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণে সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, জানুয়ারিতে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩২ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সব পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
তৈরি পোশাক পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে নিট পোশাক খাতে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের শুরুতে নিটের বিপরীতে ওভেন পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হলেও কয়েক মাস ধরে তা-ও বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৭১ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এসেছে হোম টেক্সটাইল পণ্য থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৮৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। এ সময়ে বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আলোচিত সময়ে এ খাতের পণ্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের। রপ্তানি হয়েছে ২১ কোটি ৬১ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮৬ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এ খাতের পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কেমিক্যাল পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ওষুধ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২১ শতাংশ।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে কয়েক বছর ধরেই পিছিয়ে পড়ছিল বাংলাদেশ। তবে চলতি অর্থবছরে এ ক্ষেত্রেও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৬৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে সব খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় ৯ শতাংশের বেশি কমেছে।