
তাড়াশে ঐতিহ্যবাহি ‘দই মেলা’
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বরস্বতী পূঁজা উপলক্ষে প্রায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা হয়েছে। তাড়াশ উপজেলা সদরের মেলায় দইসহ নানা রসনা বিলাসী খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমা সহ খাবার বেচা-কেনা হচ্ছে।
দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারনে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন-ক্ষীরসা দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে ও দামের দই বিক্রি হয়। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর,তাড়াশের দইও প্রচুর বেচাকেনা হয়। আর এ দইয়ের মেলাকে ঘিরে ইতি মধ্যেই এলাকায় সাঁজ সাঁজ রব পড়ে গিয়েছে।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে সারাদিন তাড়াশ উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড ময়দানে নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে তাড়াশের প্রায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, সিরাজগঞ্জ’ শীর্ষক বইয়ে তাড়াশের এ দই মেলার বর্ণনা রয়েছে। বইটির প্রধান সম্পাদক শামসুজ্জামান খান বিস্তারিতভাবে এ মেলার বিবরণ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, একসময় এ মেলায় ৭০০-৮০০ জন ঘোষ প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মণ দই নিয়ে এসে বিক্রি করতেন। তখন অবশ্য মেলা হতো তিন দিনের। বর্তমানে দিনব্যাপী মেলায় কয়েক শ মণ দই বিক্রি হয়।
বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা দই বিক্রেতা শুকুমার ঘোষ বলেন, প্রতি বছরেই তাড়াশের এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় দই বিক্রি করতে আসেন। তবে এ বছর গরুর দুধের দাম বেশী হওয়ায় দইয়ের দামটা একটু বেশী।
রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে দই বিক্রেতা আজিজুল হক জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই দই মেলায় আসি। নিজেও বেশ কয়েক বছর যাবত দই
বিক্রির সাথে জড়িত তাই এ বছর দই বিক্রি করতে এসেছি।
দইয়ের ক্রেতা গৌতম সরকার বলেন, উপজেলার দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা উপলক্ষে এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে এক উৎসব মুখর আমেজ তৈরি হয়। প্রতিটা বাড়িতে স্বরস্বতী পূঁজা ও দই মেলাকে ঘিরে আত্বীয়-স্বজনদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়।
তাড়াশ প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রভাষক সনাতন দাশ জানান, জমিদারি আমলে তাড়াশের সেই সময়ের জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করে ছিলেন। জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন হয়।