
দ্বিতীয় এলিজাবেথের রানি হওয়ার ৭০ বছরপূর্তি আজ
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। নানান কারণে রানি আলোচনায় থাকেন। কেননা ব্রিটেনের রাজা-রানিরা শুধু ইংল্যান্ডের কাছে নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের রানি হিসেবে ৭০ বছরের রাজত্বকাল পূর্ণ করতে চলেছেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটেনের সিংহাসনে অনেক রানি এসেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার তার ৭০ বছরের রাজত্বকাল পূর্ণ হচ্ছে। এদিকে আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি স্বামী প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাজের প্রশংসা করেছেন। মূলত তিনি ঐ দিন করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে রানির একাকী এক আসনে বসার প্রশংসা করেন।
তার আগে কোনো ব্রিটিশ শাসকেরই টানা সাত দশক সিংহাসনে আসীন থাকার ইতিহাস নেই। রানির পর সিংহাসনের দাবিদারদের মধ্যে রয়েছেন তার ছেলে যুবরাজ চার্লস, নাতি যুবরাজ উইলিয়ামসহ আরও অনেকে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বিশ্বের প্রথম কোনো রাজপরিবারের সদস্য, যিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে কোথাও রাজত্ব করছেন। দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স এখন ৯৫। রানি হিসেবে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেন তিনি। তখন থেকেই তিনি ব্রিটেনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের একজন মূল কারিগর হিসেবে নিজের ছাপ রেখে চলেছেন। আধুনিক ব্রিটেনের পাশাপাশি তিনি ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী অতীতের সাক্ষী হিসেবেও থেকেছেন। তাকেই ব্রিটিশ রাজপরিবারের সব থেকে জনপ্রিয় সদস্য হিসেবে মনে করা হয়।
তবে আজ রবিবার নিভৃতে নিজের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবেন। তাই দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছরের রাজত্বকাল পূর্তিতে তেমন কোনো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখবে না ব্রিটেন। তবে আগামী জুনে সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তিতে চার দিনের উত্সব উদযাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ এবং একটি সংগীতানুষ্ঠান। তার এই কীর্তিকে চিরস্মরণীয় করে তোলার জন্য ইতিমধ্যে স্মারক মুদ্রাও তৈরি করা হয়েছে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬ সালে। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসন লাভ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৩৭ সালে ব্রিটেনের রাজা হন। এলিজাবেথ ছিলেন তখন ব্রিটিশ সিংহাসনের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম জনসম্মুখে আসেন। আঠার বছর বয়সে সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ মৃত্যুর পর এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন।
কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে গোটা বিশ্বে আগ্রহের কারণ তিনি। ব্রিটেনের অনন্য প্রতিচ্ছবি জীবন্ত কিংবদন্তি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সিংহাসনে হীরকজয়ন্তীর মাইলফলক স্পর্শ করে অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন ইতিমধ্যে। ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। রাজসিংহাসন শাসনে ৭০ বছরে পা দিয়েছেন মহারানি। এই দীর্ঘ সময়ে তার জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি।
ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে রানি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি এই বিরল দীর্ঘতম সময়কে ছুঁয়ে দিতে সমর্থ হলেন। এর আগে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানি ভিক্টোরিয়ার। ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন ভিক্টোরিয়া। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ অবধি রানির আসনে আসীন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানির সিংহাসনের হীরকজয়ন্তী পালনের অভিজাত এই বিশেষ স্মারক বইয়ে উঠে এসেছে তার নিয়ন্ত্রণাধীন রাজ্যের নানা ছবি ও নানা স্মৃতি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল। পিতা ষষ্ঠ জর্জ ও মাতা এলিজাবেথ বউয়েস। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। সে সময় ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ। তার আমলে ব্রিটেনে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ জন প্রেসিডেন্ট ও ছয়জন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সফর করেছেন পৃথিবীর ১১৬টি দেশ।
এলিজাবেথের দাম্পত্যসঙ্গী হলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরা। তাদের চার সন্তান—চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রু ও অ্যাডওয়ার্ড। ১৯৪০ সালে এলিজাবেথ প্রথম রেডিও বিবিসিতে শিশুদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রথম জনসম্মুখে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। —এএফপি ও বিবিসি