
দুই শিশুর জিম্মা চেয়ে জাপানি মায়ের আপিলের রায় ১৩ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর দুই মেয়েকে নিয়ে তাদের মায়ের পক্ষে করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।
এছাড়া আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই দুই শিশু তাদের মায়ের কাছে থাকবে। তবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন।
জাপানি মায়ের পক্ষে আদালতে আজ শুনানি করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে বিষয়টি রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল একই বেঞ্চে শুনানির কথা ছিল। কিন্তু আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি নাজমুল আহাসান মারা যাওয়ায় গতকাল তার সম্মানে সুপ্রিম কোর্টের (আপিল ও হাইকোর্ট) উভয় বিভাগের বিচার কাজ বন্ধ ছিল। তবে আজ আবার রোববারের কাযর্তালিকা অনুযায়ীই আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিষয়টিতে শুনানি হয়।
গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) ওই দুই শিশুকে মায়ের কাছে নিতে মায়ের পক্ষে নিয়মিত আপিল আবেদন (সিপি) করা হয়। ওইদিন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আমরা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেয়েছি। রায় সংযুক্ত করে নিয়মিত আপিল (সিপি) দায়ের করেছি। এজন্য এই বিষয়ে শুনানিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আপিল বিভাগের আদালত।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সকালে আপিল বিভাগ ইমরান শরীফ ও ডা. এরিকো নাকানোর দুই মেয়েকে তাদের মায়ের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার আদেশ দেন। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ড থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।
কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
এরপর একই বছরের ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।