
আজ শুরু উত্তর প্রদেশের ভোট, অগ্নিপরীক্ষা বিজেপির
ভারতের উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই প্রথম ধাপে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের ১১ জেলার ৫৮ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মোট সাত দফায় নির্বাচন হবে ৪০৩ আসন-বিশিষ্ট এ বিধানসভার।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের জাঠ সম্প্রদায় অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ও সমাজবাদী পার্টির (এসপি) শক্তি বেশি থাকলেও গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে এখানে ভালো ফল করেছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে, কৃষক আন্দোলন বিজেপির জনপ্রিয়তায় কতটা ফাটল ধরিয়েছে তার পরীক্ষা আজ। এ পর্বে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর ভাগ্যপরীক্ষা হবে। পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশের প্রথম দফার ভোটে ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার নয় মন্ত্রীর ভোট-ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটারেরা। আর, এ পরীক্ষার ফল জানা যাবে ১০ মার্চ।
সাত দফা নির্বাচনে প্রথম পর্বের ভোট ৫৮ আসনে, পাঁচ বছর আগে বিজেপি যেখানে কাউকে আঁচড় পর্যন্ত কাটতে দেয়নি। সেবার এই অঞ্চলে তারা ৫৩টি আসন জিতেছিল। পরের পর্ব ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভোট ৫৫ কেন্দ্রে, যেখানে বিজেপি জিতেছিল ৩৮ আসন। দুয়ে মিলে ১১৩ আসনের মধ্যে ৯১টি জেতার পর বিজেপিকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৪০৩ বিধানসভায় তারা পেয়েছিল ৩১২। সহযোগীরা মিলে জোটের সংখ্যা পৌঁছেছিল ৩২৫। অথচ এবার রাজ্যের এই জাট ও ব্রজভূমিই তাদের বলিরেখা গভীর করে তুলেছে।
কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা, বেহাল অর্থনীতি, বেকারত্ব, প্রশাসনের বাড়াবাড়ি রকমের ‘ঠাকুরবাদ’জনিত অসন্তোষ তো আছেই, শাসকের বলিরেখা গভীর করে তোলার জন্য প্রধানত দায়ী কেন্দ্রীয় তিন কৃষি আইন। উত্তর ভারতের কৃষিপ্রধান অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে থাকা মানুষদের যা আন্দোলনে টেনে আনে। বিপদ কতখানি, সেই উপলব্ধি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যখন হলো, যে সময় তিন আইন বাতিল করলেন, ততক্ষণে ধর্ম ও জাত ভুলে কৃষক সমাজ এককাট্টা। ২০১৩ সালের মুজাফফরনগরের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা গোটা উত্তর প্রদেশে তো বটেই, বিশেষ করে জাটভূমিতে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে পাঁচিল তুলে দিয়েছিল, কৃষক আন্দোলন তা ভেঙে দেয়। এই বিভাজন, আরও স্পষ্ট করে বললে জাট ও মুসলমানের সংঘাতের ফসল, ২০১৪ ও ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে লাভবান করেছিল। কৃষক আন্দোলন ধর্ম ও জাতের সেই ভাগাভাগি কতটা মিলিয়ে দিতে পারল, কতটা এক জোট হয়ে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগানকে সার্থক করে তুলতে পারল, তার প্রতিফলনের ওপর ঝুলে থাকছে উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভাগ্য। এবারের ভোট সেই কারণে তাই ‘কমণ্ডলু বনাম মণ্ডল’ রাজনীতির দ্বৈরথে পর্যবসিত।
ভোটের আগে ভোটারদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভোটারদের সতর্ক করে বলেছেন—বিরোধী দলগুলোকে ক্ষমতায় ফিরতে দেওয়া হলে উত্তরপ্রদেশ কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় পরিণত হবে।
ভোটারদের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদির বার্তা
নিজেদের ভোট দিয়ে ‘গণতন্ত্রের পবিত্র উৎসবে’ সামিল হতে ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
টুইট বার্তায় এদিন মোদি লেখেন, ‘আজ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট। আমি সব ভোটারকে কোভিডের নিয়ম মেনে গণতন্ত্রের এ পবিত্র উৎসবে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করছি। মনে রাখবেন—আগে ভোট দিন, তারপর জলখাবার!’