
সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামান মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসন পুলিশ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছিলেন। সাবেক এ হাইকমিশনারকে আটকের এক দিন পর মালয়েশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করল। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে এম খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরী হামজা জয়নুদ্দিন। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক খায়রুজ্জামানকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বুধবার সকালে কুয়ালালামপুরের আমপাংয়ে নিজ বাসা থেকে খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করল।
আটকের পর খায়রুজ্জামানের আইনজীবী অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই খায়রুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দিলে আইনজীবী আদালতে হেবিয়াস কর্পাস দায়ের করবেন।
হেবিয়াস কর্পাস একজন বন্দি বা বন্দিকে আদালতের সামনে আনার জন্য ব্যবহৃত হয় যে ব্যক্তির কারাদণ্ড বা আটক আইনানুগ কিনা।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। পরে খালাস পেয়ে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
ফিরে আসার পর ঝুঁকি নিয়ে খায়রুজ্জামান কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড পান এবং সেখানেই থেকে যান।
সাবেক হাইকমিশনার খায়রুজ্জামান গ্রেফতার ‘ঢাকার অনুরোধেই’: মালয়েশিয়ার স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদ্দিন।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হামজা জয়নুদ্দিন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রক্রিয়া অনুযায়ী সাবেক এ হাইকমিশনারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য তাকে (খায়রুজ্জামান) আটকের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানিয়েছিল।
খায়রুজ্জামানকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেফতার বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে শিগগির দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠিতে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি আইন ভাঙার কথা জানিয়েছে। এটা দূতাবাস জানে, আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। হয়তো ওভার স্টে, যে প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন হয়তো সেটা এক্সপায়ার করে গেছে। কোনো আইন তিনি ভেঙেছেন, সেটার আওতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, শরণার্থী কার্ড তার আছে কি না আমি জানি না। মালয়েশিয়া সরকার বলেছে, নির্দিষ্ট করে, অভিবাসন সংক্রান্ত আইন ভাঙায় তাকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অব্যাহতভাবে খুঁজি। সবসময় বলা হয় না, বলার প্রয়োজনও নেই। যদি না সেটা সফল হয়। আমরা জানতাম তিনি মালয়েশিয়ায় আছেন। মালয়েশিয়া থেকে বের হতে পারেননি বা এরকম কিছু। এ ধরনের অপরাধী বা কথিত শব্দটি যদি ব্যবহার করি, পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ যে রকম আশ্রয় দেয়। খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে অনেক জায়গায় দেখেছেন। এ রকম সুযোগ মালয়েশিয়ায় নেই। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেবে মামলাটির কোন পার্যায়ে তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অথবা মামলাটি কীভাবে পুনরুদ্ধার করা হবে।
আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, একটি মামলার আসামি, যদিও একটা পর্যায়ে সাজা প্রাপ্তির সম্ভাবনা ছিল। পরে কোর্ট প্রসিডিংস, মাঝে বিএনপি সরকার এসেছে যারা এই কর্মকা-গুলোর সঙ্গে জড়িত। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ব্যর্থতাগুলো, এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ রকম অনেক মানুষকে অব্যাহতভাবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের চালিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা যদি নিশ্চিত হই, তার কাছে ইউএন রিফিউজি কার্ড আছে, আমরা দেখবো ইউএন-এর কর্মকা-গুলোতে সদস্য রাষ্ট্রের আইনও প্রতিফলিত হয়। কারণ কোনো আইনই ইউএন করে না যেখানে কোনো সদস্য রাষ্ট্রের স্বার্থহানি হয়। বা লিগ্যাল প্রসেস বাধাগ্রস্ত হয়।
এক যুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসা খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে পরে তাকে এ সংক্রান্ত মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়। কিন্তু ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী কার্ড নিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মিয়ানমার, মিসর ও ফিলিপাইনে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে কাজ করেন খায়রুজ্জামান।