
বাপ্পি লাহিড়ির শ্মশানযাত্রা
ভারতীয় সংগীতাঙ্গনে আরও এক জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের পতন হলো। লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠার আগেই উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী না ফেরার দেশে।
গতকাল বুধবার তাঁর শেষকৃত্য হয়নি। একমাত্র ছেলে বাপ্পা লাহিড়ির পথ চেয়ে বসেছিল পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে আজ ভোরে মুম্বাইয়ে ফিরেছেন বাপ্পা। বিমানবন্দরে স্ত্রী-পুত্রসহ ক্যামেরাবন্দি হন বিধ্বস্ত বাপ্পিপুত্র।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, আজ ভারতীয় সময় সকাল ৯টার দিকে বাপ্পি লাহিড়ির শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়। পরে বাপ্পির মরদেহ নিয়ে মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে শ্মশানের উদ্দেশে যাত্রা করেন পরিবারের সদস্যসহ অন্যরা। পৌনে ১১টার দিকে শ্মশানে পৌঁছান তাঁরা। শ্মশানের উদ্দেশে যাওয়ার পথে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাপ্পি লাহিড়ির মেয়ে রিমা লাহিড়ি।

গতকাল আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পরিবার জানায়, ‘আমাদের কাছে এটা চরম শোকের একটা মুহূর্ত। মধ্যরাতে প্রিয় বাপ্পিদা আমাদের ছেড়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন। আগামীকাল ভোরে বাপ্পা লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ফিরলে শেষকৃত্য হবে। দয়া করে ওঁনার আত্মার শান্তি কামনা করুন। আমরা আপনাদের বিশদে জানাব—মিসেস লাহিড়ি, গোবিন্দ বানসাল, বাপ্পা লাহিড়ি, রিমা লাহিড়ি।’
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে জন্ম বাপ্পি লাহিড়ির। তার ডাক নাম ছিল আলোকেশ বাপ্পী লাহিড়ি। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক এবং মা বাঁশরী লাহিড়ি ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়িকা। বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে থেকেই সংগীতকলায় হাতেখড়ি বাপ্পির। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী চিত্রাণী, কন্যা রিমা এবং পুত্র বাপ্পা ছাড়াও অসংখ্য ভক্ত-গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাপ্পি লাহিড়ি পোশাকের সঙ্গে স্বর্ণের অলঙ্কার ও কালো চশমা পরতে খুব পছন্দ করতেন। কালজয়ী সংগীতশিল্পী কিশোর কুমার সম্পর্কে তার মামা।
হিন্দিতে ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, বাংলায় ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশা ও ভালবাসা’, ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’ প্রভৃতি ছবিতে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন অসংখ্য গান। ২০২০ সালে তার শেষ গান ছিল ‘বাগি- ৩’ ছবির জন্য। তিনি বেশ কিছু গজলও লিখেছেন।
সংগীতের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের একটা পর্যায়ে বাপ্পি লাহিড়ি রাজনীতিতে পা রাখেন। যোগ দেন বিজেপিতে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েন। যদিও তিনি রাজনীতিতে কখনোই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না।