
নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস
করোনায় কেউ হারিয়েছেন চাকরি। আবার কারও আটকে আছে বেতন। অথচ মহামারির এ সময়ে চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। ২০০-২৫০ টাকার নিচে নেই কোনো ভালো মাছ, ১৭০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি, ৬৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস, ১০০০ টাকা কেজি খাসির মাংস। আবার ভরা মৌসুম থাকলেও চড়া সবজির বাজার। মোটা চালের কেজি ৫২ টাকা, সয়াবিন তেল ১৬৫-১৬৮ টাকা।
শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন পরিস্থিতিই দেখা যায়।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা অসহায় নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ। কিছু দাম কমানোর আশায় এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে ঘুরে হয়রান তারা।
সরেজমিনে মাছ ও সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, মাঝারি রুই মাছ ২৫০-২৭০ টাকা, ছোট কাতল মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ টাকা, বড় পাঙ্গাশ মাছ ২৮০-৩০০ টাকা, আকার ভেদে ইলিশ মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, সিলভার কার্প মাছ ২০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ টাকা, ফালি মাছ ৪৫০ টাকা, আইর ৬০০ টাকা, বড় কৈ ৬০০ টাকা, বেলে ৪৫০ টাকা, শিং ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছোট মাছের মধ্যে চিংড়ি ৩০০ টাকা, কাচকি ৪৫০ টাকা, মলা ৩০০ টাকা, টাটকিনি ২৫০ টাকা, পাবদা ৫০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকার ভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে বড় সুরমা মাছ ৩০০ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০-৮০০ টাকা, লাল কোরাল ৫০০-৬০০ টাকা ও বাটা মাছ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছ বাজার কিছুটা চড়া জানিয়ে বিক্রেতারা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত মাছের সরবরাহ থাকার পরও খাবারের দাম ও জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। শুধুমাত্র হোটেলগুলোতেই বড় মাছ বিক্রি হচ্ছে। খুব কম সংখ্যক সাধারণ মানুষই বড় মাছ কিনছে। অতিরিক্ত দাম নিয়ে আমাদেরও কিছু বলার নেই।
অপরদিকে বাজারে শাক সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চড়া সবজির বাজার। টমেটো ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শিম ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, শসা ৩৫ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০, পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, রসুন ১১০-১২০ টাকা, গোল আলু ২০ টাকা, দেশী আদা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও লাউ ৯০-১০০ টাকা, ব্রুকলি, ফুলকপি, পাতা কপি ৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, আটা-ময়দা, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংস এবং ডিমের দাম বেড়েছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে সব শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকা, যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া বাজার ঘুরে এবং
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, যা সপ্তাহ আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি সপ্তাহের ব্যবধানে ২ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি পণ্যের মধ্যে মুগডাল ১২৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, এংকর ডাল ৪৫ টাকা, মসুর ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, খোলা চিনিগুড়া চাল ৯০-১০০ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭০ টাকা, চিনি ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. রাকিব হোসেন বলেন, বাজারে এলে কান্না পায়। কারণ আয় বাড়ে না, ব্যয় বাড়ে।
তিনি জানান, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন পান। কিন্তু পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে দুই ছেলে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।