আবেগের দিনে বইমেলায় জনস্রোত, নতুন বই এসেছে ২২৪টি
ভাষার অধিকার আদায়ে রক্ত ঝরানোর দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। দিনটি প্রতিটি বাঙালির আবেগের একটি দিন। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ছুটির দিন থাকায় আজ অমর একুশে বইমেলায় জনসমাগম ছিল বেশি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তম দিনে ২২৪টি নতুন বই এসসছে।
সোমবার মেলা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে চলেছে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ১২ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২২। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘ফিরে দেখা: আমাদের ভাষা আন্দোলন’- শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আমাদের একুশ এখন সারা বিশ্বের। একুশের সত্তর বছর আমাদের জাতিসত্তার উৎসমূলে নতুন করে দৃষ্টিপাত এবং ভাষা-সংস্কৃতি ও জাতিতাত্ত্বিক নিবিড় আত্মঅন্বেষায় উদ্বুদ্ধ করে।
প্রবান্ধিক ও কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, আজ ২১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশের সত্তর বছর পূর্ণ হল। তবে বাঙালির ভাষা আন্দোলন কেবল সত্তর বছরের বিষয় নয়। হাজার বছর ধরে বাঙালি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারের জন্য লড়াই করে এসেছে। এ লড়াই কেবল সাংস্কৃতিক লড়াই ছিল না, এ লড়াই ছিল অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববাংলার সংগ্রামী জনগণের লড়াকু ভূমিকা। তারা এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিণতিতে নিয়ে গেছে এবং কালক্রমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে আসন্ন করেছে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, অমর একুশের সত্তর বছরপূর্তি বাঙালি জাতির জন্য পরম গৌরবের বিষয়। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক।
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, বিমল গুহ এবং আবদুস সামাদ ফারুক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি শিল্পী দেওয়ান সাইদুল হাসান, জয়ন্ত রায়, শাহাদৎ হোসেন নিপু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পা ও ফরহাদ আহমেদ শামীম। সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব চন্দ্র ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, স্বর্ণময়ী মণ্ডল, তাজুল ইমাম ও আরিফ রহমান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড), মো. আরিফ কোরাইশী (গীটার), মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চে সকাল ৮টায় কবি অসীম সাহার সভাপতিত্বে শুরু হয় ‘কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ’। স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন অর্ধশতাধিক কবি। বিকেল ৩টায় এই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবিকণ্ঠে একুশে কবিতাপাঠ। স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন পঁচিশজন কবি। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সচিব কবি হাসানাত লোকমান। অমর একুশের সত্তর বছর পূর্তি স্মরণে এই মঞ্চে বিকেল ৪ টায় প্রদর্শিত হয় শহীদ জহির রায়হান পরিচালিত ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’।
আগামীকালের অনুষ্ঠান: মেলার অষ্টম দিন আগামীকাল। মেলা চলবে দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ : লেখক বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশ নেবেন ঝর্না রহমান এবং তানভীর আহমেদ সিডনী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।