সিসিইউতে ভর্তি খালেদা জিয়া
শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে দিবাগত রাত ৩টা ২০মিনিটে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন। ৩টা ২০ মিনিটে ম্যাডামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন চিকিৎসকরা উনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে বিএনপির আরেক প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানিয়েছেন, দলের চেয়ারপারসন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মধ্যরাতে দ্রুত তাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে রাত ৩টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সঙ্গে থাকা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরবর্তী চিকিৎসা বিষয়ে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে আরও আসেন- সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, চেয়ারপারসনের একান্ত সহকারী এ বি এম আব্দুস সাত্তার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, খালেদার ভাতিজা অভিক ইস্কান্দার এবং গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম।
‘বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে’- এ দুই শর্তে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তিতে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১ (১)-এর ক্ষমতাবলে সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমবারের মতো শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর দফায় দফায় বাড়ে তার মুক্তির মেয়াদ। সবশেষ গত মার্চ মাসে শর্ত অপরিবর্তিত রেখে আরও এক দফা তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে সায় দেয় সরকার।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে গুলশানে তার বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে টানা ৮১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেন খালেদা জিয়া।
এর আগে গত বছরের এপ্রিলে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হলে সে দফায় একই হাসপাতালে ৫৪ দিন চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়।
ওই বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাত বছরের সাজা হয়।