তত্ত্বাবধায়কের রূপরেখা করছে বিএনপি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির দাবি জোরালো হচ্ছে। এ দাবি আদায়ে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে দলটি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিরোধীতা করে আসছে। মাঠের বিরোধীদল বিএনপি দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে তত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবি নিয়ে ঐক্যমত পৌঁছানো এবং এ দাবি আদায়ে আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করছে। মুলতঃ বিএনপি ১৯৯৬ সালের আদলেই রূপরেখা চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনই প্রকাশ না করার কথা জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জোটের বাইরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে দলটি।
‘২০১১ সালের ১০মে বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেয়। এছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়।’ এ সময়ে দলীয় সরকারের অধীনে দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে আবার কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূন:প্রবর্তন প্রয়োজন হলো তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলো।
বিএনপির দাবি, ২০১৪ সালে যে নির্বাচন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রমান হয়েছে দলীয় সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যে কারণে দলীয় সরকার নির্বাচনের বিগত দিনের তথ্য উপাত্ত সামনে নিয়ে আসছে দলটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও এনপিপির সাথে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ১৯৯৬ সালের সংবিধানের আলোকেই তত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। দাবিগুলো চূড়ান্ত করে শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলন শুরু করা হবে। তখন সব রূপ রেখা জানতে পারবেন।
সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের ধরন, নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকার, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদসহ নানা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় সংলাপে।এর আগে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
‘‘সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) ধারায় বলা হয়েছে; ‘মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নববই দিনের মধ্যে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। এবং (খ) ‘মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নববই দিনের মধ্যে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরুপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’’
সাংবিধানে নির্বাচনের বিষয়টি ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ্য আছে, আবার কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাবে? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার মনে করেন, আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগ তিন তিন বার ক্ষমতায় আছে। তারা যে প্রক্রিয়ায় সংবিধান পরিবর্তন করেছে, সেই প্রক্রিয়ায় আবারও ফিরে আনা সম্ভব। এই নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো রূপরেখা দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন সাবেক স্পিকার।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়ে তা জাতির সামনে পরিস্কার। দিনের ভোট কিভাবে রাতে নেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রশাসন ও নিবার্চন কমিশনকে ব্যবহার করে এটা ভোট চুরি নয়, ভোট ডাকাতি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সব সময় বলে আসছি দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। তাই এ সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
দলীয় সরকারের অধীনে প্রথম বারের মত ২০১৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে বাইরে থেকে যায়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ফলে সে বিবেচনায় ২০১৮ সালের এই জাতীয় নির্বাচনের একটা ভিন্ন দিক ছিল। এই নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে।
বিগত দুটি নির্বাচনেই নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়াভাবে ভোট করার অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে ভোট নিয়ে অনেক প্রশ্ন এবং অভিযোগের পাল্লা অনেক ভারী। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদ পার করছে। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পেয়ে বিরোধীদলের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্ব্বোচ আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি বিরোধীদলের দ্বায়িত্ব পালন করছে।