
তুরস্কের নির্বাচন ‘পক্ষপাতদুষ্ট’, অভিযোগ প্রতিপক্ষের
তুরস্কে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ান। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মত দ্বিতীয় ধাপে নেয়া ভোটে এগিয়ে থাকায় রাত থেকেই উদযাপন করছেন এরদোয়ানের সমর্থকরা। রোববার রাতে আঙ্কারার শহরতলীতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোয়ান বলেন, সাড়ে আট কোটি মানুষের পুরো দেশই আজ জিতেছে। যদিও তার এই ঐক্যের ডাক অবশ্য অনেকের কাছেই ফাঁকা বুলির মত মনে হচ্ছে। কারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দাবি করার পাশাপাশি বিরোধী নেতা কেমাল কিলিচদারুলুকে ব্যঙ্গ করেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এছাড়া কারাগারে থাকা কুর্দিশ এক নেতা এবং এলজিবিটি কমিউনিটিকে সমর্থন করে তৈরি করা নীতির সমালোচনাও করেছেন।
বিরোধী নেতা কিলিচদারুলু অবশ্য এখনো স্পষ্টভাবে হার স্বীকার করেননি। তিনি অভিযোগ করেছেন এবারে ‘সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন’ হয়েছে। কিলিচদারুলু বলছেন যে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে। প্রায় পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করার পর দেখা যায়, এরদোয়ান প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
এই নির্বাচনকে তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এরদোয়ান বলেছেন, “কে জিতেছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল তুরস্ক জিতেছে।” তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যঙ্গ করে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “বাই বাই বাই কেমাল।” আঙ্কারায় তার সমর্থকরাও পরে এভাবেই বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। বিরোধী দলের নির্বাচনি প্রচারণার বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করেন এরদোয়ান। এর মধ্যে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে সমর্থন করে, এমন নীতির কঠোর সমালোচনা শোনা যায় এরদোয়ানের মুখে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে তার আদর্শের বিরোধী এ ধরণের নীতি।
চূড়ান্ত ফলাফল এখনো নিশ্চিতভাবে ঘোষণা হয়নি, কিন্তু তুরস্কের সর্বোচ্চ নির্বাচন কাউন্সিল বলছে যে এরদেোয়ানের বিজয় নিয়ে কোনো সন্দেহই আর নেই। এই নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ২৫ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হল। বিজয় উদযাপনের লক্ষ্যে এদিন আঙ্কারায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দরজা খুলে দেয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। এতে যোগ দেন আঙ্কারার সব জায়গা থেকে সমর্থকরা জড়ো হন। উপস্থিত অনেককেই দেখা যায় প্রাসাদের বাইরে ঘাসের ওপর তুরস্কের পতাকা রেখে নামাজ আদায় করতে। এক রাতের জন্য তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট ভুলে গিয়েছিল মানুষ। উপস্থিতদের একজন বলছিলেন, “আমরা তার অর্থনৈতিক নীতিতে খুশি। পরের পাঁচ বছরে তিনি আরো ভালো করবেন।” তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজেও স্বীকার করেছেন যে মূল্যস্ফীতিই এখন তুরস্কের এক নম্বর ইস্যু।
প্রশ্ন উঠছে, তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কিনা। তুরস্কে বছরে প্রায় ৪৪ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। দেশটিতে খাদ্য, বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই মূল্যস্ফীতির জন্য এরদোয়ানের গতানুগতিক অর্থনৈতিক ধারা অনুসরণ না করা এবং সুদের হার না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে দায়ী করে থাকেন সমালোচকরা। ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দামেও রেকর্ড দরপতন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে এরদোয়ানের সমর্থকরা অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছেন না। তারা সারা বিশ্বে তাদের নেতার জনপ্রিয়তার বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। দুই হাজার ষোলো সালে বানচাল হয়ে যাওয়া এক সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করেন এবং ব্যাপক ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। এবারের নির্বাচনের আগে তার বিরোধীরা অঙ্গীকার করেছিল যে তারা এই পদ্ধতির পরিবর্তন করবে। তুরস্কের বিরোধী দলগুলো এখন ২০২৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে।