ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড্যানিয়েল হাগারিকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে মুখপাত্রকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসরাইলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির। ইসরাইলের একাধিক গণমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে।
ইসরাইলি সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর নতুন প্রধান মেজর জেনারেল ইয়াল জামির গত শুক্রবার (৭ মার্চ) সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড্যানিয়েল হাগারিকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত না করা এবং তাকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইসরাইলি পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (কান) জানিয়েছে, ড্যানিয়েল হাগারিও বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই পদত্যাগ করবেন তিনি। তবে এই পদক্ষেপকে তিনি ‘জোরপূর্বক’ অবসর বলে অভিহিত করেছেন।
সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য মতে, ‘সামরিক মুখপাত্র সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরের সাথে একমত হয়েছেন যে তিনি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করবেন এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেবেন।’
ইয়াল জামির আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই দিন পরই ড্যানিয়েল হাগারিকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। গত সপ্তাহে সাবেক সেনাপ্রধান হারজি হালেভির দায়িত্ব নেন জামির। হালেভি ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন এবং এরপর সম্প্রতি পদত্যাগ করেন।
কান জানিয়েছে, হাগারি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের আস্থা হারিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার মতবিরোধ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আর কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতি অনুসারে, সেনাপ্রধান জামির বলেছেন: ‘ইসরাইলের জন্য বছরের পর বছর ধরে হাগারির উল্লেখযোগ্য সামরিক সেবার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, হাগারি ‘ইসরাইলের ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল যুদ্ধগুলোর একটিতে পেশাগতভাবে ও নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন’।
গত জানুয়ারি মাসে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা ও এর পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে রাষ্ট্রীয় তদন্তকারীদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য হালেভিকে নির্দেশ দেয়ার পর থেকে।
এ বিষয়ে এক বিরল প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এই ধরনের বিষয়গুলো প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত, মিডিয়ার মাধ্যমে নয়।’
ইসরাইলি নৌবাহিনীর শায়েতেত ১৩ ইউনিটের একজন সাবেক কমান্ডার হাগারি গাজা সংঘাতকালে গণমাধ্যমের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সহায়তায় দখলদার ইসরাইল বাহিনী গাজায় টানা ১৫ মাস ধরে রীতিমতো গণহত্যা চালিয়েছে।
গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারীর মধ্যে ৪৮ হাজার ৪০০ নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। একই সময়ে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। ১৪ হাজারেরও বেশি এখনও নিখোঁজ রয়েছে।