পাবনা মানসিক হাসপাতাল এখন নিজেই ‘অসুস্থ’
দেশের একমাত্র মানসিক চিকিৎসাসেবার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান পাবনা মানসিক হাসপাতাল নানা সংকটে জর্জরিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, খাদ্যসংকট এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এটি যেন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। সচেতন মহলের দাবি, আধুনিকায়নের মাধ্যমে হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজানো দরকার।
১৯৫৭ সালে পাবনার হিমায়েতপুরে ১১১ একর জমিতে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০, যা ১৯৯৬ সালে বাড়িয়ে ৫০০ করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবকাঠামোর বেহাল দশা দেখা দেয়। শুরুর দিকে ৫৩টি ভবন থাকলেও বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট আছে, যা ব্যবহারের অনুপযোগী।
বর্তমানে এখানে একজন পরিচালকসহ ১২ জন চিকিৎসক, ২৮০ জন নার্স ও ৪০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন। কিন্তু ৩১টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৯টি শূন্য, বিশেষজ্ঞ মাত্র দুজন। সব মিলিয়ে ৬৪৩টি পদের মধ্যে ১৮২টি ফাঁকা রয়েছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে, রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, কিন্তু পাবনা মানসিক হাসপাতাল এখনও অ্যানালগ ব্যবস্থাতেই চলছে। দুপুর ১টার মধ্যে রোগী দেখার কাজ শেষ হয়ে যায়, ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অনলাইনে সিরিয়াল নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট বরাদ্দ কম। ভর্তি রোগীদের পুষ্টিকর ও মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। প্রতিদিন চার বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা। গত বছর টেন্ডার জটিলতায় খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে সংকট কাটলেও মানের উন্নতি হয়নি। রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, বাইরের খাবার দেয়া নিষিদ্ধ থাকায় নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানো হয়, যা নিত্যদিনের ঘটনা। চিকিৎসা, ওষুধ সরবরাহ ও অন্যান্য কাজে হয়রানির শিকার হন রোগী ও স্বজনরা।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, ‘অনেক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে, পূরণের চেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। খাবারের সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। রোগী হয়রানির বিষয়ে প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতাল কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না। স্থানীয়রা মনে করেন, হাসপাতালটিকে আধুনিকায়ন এবং চিকিৎসক সংকট নিরসন করা হলে রোগীরা উপকৃত হবেন।