প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবলের কাছে হেরে যায় সব প্রতিবন্ধকতা। আর এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ মাহমুদুল হাসান আশরাফী। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি নিয়ে বাবা ও মাদ্রাসার ছাত্রদের সহায়তায় শুনে শুনে কোরআন মুখস্থ করা মাহমুদুল তার প্রতিভার জোরে দেশ-বিদেশে ধর্মবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সুনাম কুড়িয়েছেন, পেয়েছেন বহু পুরস্কার।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে এসে দেশটির মসজিদ আল-ওয়ালিদাইনে তার সুমধুর তেলাওয়াত ও হৃদয়কাড়া সুরে তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন। এতে মুগ্ধ স্থানীয় নাগরিক থেকে শুরু করে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।
১৯ বছর বয়সি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ শেখ মাহমুদুল হাসান আশরাফী কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বালুচর গ্রামের কোরআনে হাফেজ ইমামুল হোসাইন এর একমাত্র সন্তান। তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শান্তিধারা এলাকার মারকাযুল মদিনা আল লতিফি আল ইসলামি মাদরাসায় পড়ছেন।
মালদ্বীপের ধর্ম মন্ত্রণালের আমন্ত্রণে ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে আসেন তিনি। আগামী ৬ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালদ্বীপ। এই দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে প্রায় ৪ হাজারের বেশি মসজিদ আছে। যার জন্য প্রতিবছর রমজান মাস এলেই তারাবির নামাজ পড়াতে বিদেশি হাফেজদের আমন্ত্রণ জানায় দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর জন্য বিশেষ সুবিধাজনক ভিসারও ব্যবস্থা করে দেশটি।
এর ধারাবাহিকতায় এবার দেশটির হুলহুমালে শহরের আল-ওয়ালিদাইন মসজিদে প্রথম রোজা থেকে তারাবির নামাজে ইমামতি করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ মাহমুদুল হাসান।
নান্দনিক নির্মাণশৈলী আর স্থাপত্যের অনন্য এই মসজিদটি দুই তলা বিশিষ্ট। একসঙ্গে ৭০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আর এখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হাফেজ মাহামুদুল হাসান।
হাফেজ শেখ মাহমুদুল হাসান আশরাফী কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বালুচর গ্রামের কোরআনে হাফেজ ইমামুল হোসাইন এর একমাত্র সন্তান। ছবি: সময় সংবাদ
সময় সংবাদকে তিনি বলেন, মালদ্বীপের লোকজন তাকে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। একইসাথে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তাকে খুব সম্মান দেয়। মালদ্বীপের মতো একটি দেশে রমজানে তারাবির নামাজে ইমামতি করতে পেরে তিনি খুবই গর্ব অনুভব করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি বাংলাদেশের জন্যও সম্মানের বিষয়।
মাহমুদুল জানান, ২০২৩ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত ৩৯তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হন। দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই কোরআন প্রতিযোগিতায় ৮০টি দেশের মোট ১৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। এর বাইরেও কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, লিবিয়া এবং অস্ট্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন।
এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ শেখ মাহমুদুল হাসানের পেছনে নামাজ আদায় করে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, আমাদের দেশের একজন হাফেজ রাষ্ট্রীয়ভাবে মালদ্বীপে তারাবির নামাজের ইমামতি করছেন, সেটা বাংলাদেশ এবং আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমাদের খুবই ভালো লাগছে তার পেছনে নামাজ পড়তে।
মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কল্যাণ সহকারী আল মামুন পাঠান সময় সংবাদকে বলেন, এটা আমাদের গর্বের বিষয় যে একজন বাংলাদেশি এসে মালদ্বীপের হুলহুমালে শহরের একটি মসজিদ তারাবির নামাজের ইমামতি করছেন। এ জন্য তিনি মালদ্বীপের ধর্মমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামীতে এই সুযোগ আরও প্রসারিত করার কথা জানান।
ভিনদেশের মাটিতে এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর অসাধারণ অর্জন কেবল তার ব্যক্তিগত সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের জন্যও গর্বের বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।