যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ রোধে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অবৈধ অভিবাসীদের কাজে লাগানো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান ও জরিমানার পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই কয়েকটি পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে।
এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং আফ্রিকা থেকে আসা নতুন পরিচর্যাকারীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ১০টি পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। সরকারের উদ্দেশ্য— একদিকে মালিকপক্ষ যেন কম বেতনে অবৈধ কর্মী নিয়োগ না করে, অন্যদিকে অবৈধ অভিবাসীরা যেন ব্রিটেনে টিকে থাকতে নিরুৎসাহিত হয়।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা খাত দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। ‘স্কিলস ফর কেয়ার’ নামক এক সংস্থার হিসাব বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা ভিসায় প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার বিদেশিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক অভিযানে চেশায়ার-ভিত্তিক ‘ক্যাডার হেলথকেয়ার’ নামক প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ১০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়, যেখানে ১৪ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইভাবে ‘জেয়কো রিক্রুটমেন্ট’কে ১ লাখ ৫ হাজার এবং ‘বারচেস্টার হেলথকেয়ার’কে ৬০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার আইন ভাঙলে প্রতি অবৈধ কর্মীর জন্য ৪৫ হাজার পাউন্ড এবং পুনরাবৃত্তিতে ৬০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা হাজার হাজার পরিচর্যাকর্মীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাজ্যে এসেছেন, অনেক সময় উচ্চ ঋণ নিয়ে। এক সমীক্ষা বলছে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিচর্যাকারী অবৈধভাবে ভিসা ফি দিয়েছেন, ফলে শুরু থেকেই তারা আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েছেন।
ভিসার কড়াকড়ি ও নিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীলতা অনেক সময় কর্মীদের দুর্বল করে তোলে। অনেকে ভয় পান অভিযোগ করলে কিংবা চাকরি পরিবর্তনের চেষ্টা করলে স্পনসরশিপ বাতিল হতে পারে, যার ফলে ভিসাও বাতিল হয়ে যেতে পারে। নতুন নিয়ম এই ভীতি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এপ্রিল থেকে, বিদেশি কর্মী নিয়োগের আগে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা যুক্তরাজ্যভিত্তিক কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়েছেন, এই পরিবর্তনের ফলে আগামী বছরে কম দক্ষ ভিসার সংখ্যা ৫০ হাজার কমানো হবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও ভালো বেতনের ব্যবস্থা না করে এমন কঠোরতা শ্রমবাজারে সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।