যুক্তরাজ্যের প্রতিযোগিতা ও বাজার কর্তৃপক্ষ (CMA) শিশু সূত্র শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, সংস্থাটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলিতে শিশু সূত্রের প্যাকেজিংকে মানসম্মত করার পাশাপাশি, নন-ব্র্যান্ডেড পাত্রে ফর্মুলা রাখার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে ব্র্যান্ডিংয়ের প্রভাব কমানো যায়। এ ছাড়া, বাবা-মায়েদের সুবিধার্থে, ফর্মুলা দুধ কেনার জন্য গিফট ভাউচার এবং লয়্যালটি কার্ড পয়েন্ট ব্যবহার করার সুযোগও দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিযোগিতা ও বাজার কর্তৃপক্ষ (CMA) আরও জানিয়েছে, তারা চায় যে হাসপাতালগুলোতে শিশু সূত্রের প্যাকেজিং যেন সাদামাটা ও স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়, এবং পিতামাতাদের যেন এমন তথ্য দেওয়া হয়, যা তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। এসব পরিবর্তনের ফলে বাবা-মায়েরা কম দামে সস্তা ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ কিনতে পারবেন এবং বছরে প্রায় £300 সাশ্রয় করতে সক্ষম হবেন।
তবে, CMA মূল্যসীমার মতো কোনো কড়া বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। তাদের মতে, দাম সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করলে সস্তা ফর্মুলা পণ্যগুলো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, যা কিছু অভিভাবককে আরও বেশি খরচ করতে বাধ্য করবে। তাছাড়া, মূল্যসীমা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জটিল হতে পারে, কিন্তু সরকার যদি অন্যান্য উপায়ে দাম কমাতে ব্যর্থ হয়, তবে এটি একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এছাড়া, সিএমএ আরও জানিয়েছে যে, অভিভাবকরা সাধারণত তাদের শিশুর জন্য ফর্মুলার একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড বেছে নেন, বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, যখন তাদের কাছে সঠিক, নিরপেক্ষ এবং পরিপূর্ণ তথ্য থাকে না। এ কারণে, অনেক সময় তারা উচ্চমূল্যের ব্র্যান্ডকেই বেশি বিশ্বাস করেন, যেহেতু তারা মনে করেন, দাম বাড়ালে মানও বৃদ্ধি পায়। তবে, সিএমএ নিশ্চিত করেছে যে, NHS-এর পরামর্শ অনুসারে, সব ব্র্যান্ডই শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে, এবং দাম সস্তা হলেও পণ্যের গুণমান একই।
এছাড়া, সিএমএ প্রস্তাব দিয়েছে যে, বাবা-মায়েরা দোকানে গেলে যেন সঠিক তথ্য এবং দাম তুলনা করার সুবিধা পান, এবং একসঙ্গে সমস্ত ব্র্যান্ড প্রদর্শন করা হয়, যাতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধাজনক হতে পারেন। এর মাধ্যমে, পিতামাতারা আরও সচেতন হয়ে, শিশুর জন্য সঠিক ফর্মুলা বেছে নিতে সক্ষম হবেন।
এই পরামর্শগুলো বেশ গুরুত্বের সাথে নেওয়া হচ্ছে, বিশেষত যখন দেখা গেছে, কিছু বড় কোম্পানি গত দুই বছরে ফর্মুলার দাম ৩৬% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের সময়ে অনেক পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলেছে। সিএমএ এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, বর্তমান বাজারের শীর্ষস্থানীয় তিনটি কোম্পানি – ড্যানোন, নেসলে এবং কেন্ডাল – বর্তমানে বাজারের ৯০% এরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে, যা আরও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
এইসব প্রস্তাবনা একদিকে যেমন পিতামাতাদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, তেমনি শিশু সূত্র শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও নিয়ে আসতে পারে।